বাঙালির বইমেলা – দৈনিক গণঅধিকার

বাঙালির বইমেলা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৩:১৫
বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে চাদর বিছিয়ে, বইয়ের পসরা সাজিয়ে একদিন যে বইমেলার শুরু, আজ তার ব্যাপ্তি একাডেমির চৌহদ্দি পেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানময় পরিব্যাপ্ত। একদিন যে মেলার শুরু মাঠে চাদর বিছিয়ে, আধুনা ড্রোনের কল্যাণে আকাশ থেকে সেই মেলাকেই এখন দেখায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল প্রান্ত জুড়ে বিছিয়ে থাকা সারি সারি বইয়ের স্টল আর প্যাভিলিয়নের চাদরের মতো। বইমেলার ব্যাপ্তিটা যত বড়, তারচেয়েও বড় বাঙালীর জীবনে তার প্রভাব। বইমেলা আক্ষরিক অর্থেই এখন বাঙালি আর বাঙালিয়ানা উদ্যাপনের পরম তীর্থ। একটা সময় ছিল যখন জোট সরকারের অধীনে আর তারও আগে জেনারেল এরশাদের শাসনে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে নিশ্বাস নেওয়ার একমাত্র জায়গা ছিল অমর একুশের বইমেলা। মফস্বল শহরের মেডিক্যাল ছাত্র হিসেবে সারা বছর ধরে অধীর আগ্রহে বইমেলার জন্য প্রতীক্ষার স্মৃতি এখনও স্মৃতিতে জাজ্জ্বল্যমান। সে সময়ের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু আর জয়বাংলা ছিল নিষিদ্ধ শব্দ। ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর চেয়ে বড় অপরাধ সেই জামানায় বেশি বৈ কম কিছু ছিল না। সেই দম বন্ধ করা বাংলাদেশে এগারোটি মাস কোনো মতে পার করে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনটি থেকে আমাদের ঠিকানা হতো বইমেলায় সহপাঠী, এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডি.পি.এম ডা. গোলাম কায়সারের পারিবারিক প্রকাশনা সংস্থা গ্যালাক্সি পাবলিকেশনসের স্টলটি। ফেব্রুয়ারির আঠাশটি দিন, যাকে বলা যায় রিচার্জড হয়ে আমরা ফিরে যেতাম যে যার গন্তব্যে- আবারও এগারোটি দুর্বিষহ মাস দিন গুনে পার করার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে। চিকিৎসা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বলেই হয়ত পেশাগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই আমারও আর দশজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতই বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের আজীবন সদস্যপদ রয়েছে। তবে আমাদের কাছে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য পদটি। এই সদস্য পদটির কল্যাণেই প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার বাংলা একাডেমির এজিএমে আমন্ত্রণ পাই। দেখা হয় বিদগ্ধ কিছু মানুষের সঙ্গে। একইভাবে প্রতি ফেব্রুয়ারির প্রথমদিনে বইমেলার উদ্বোধনের দাওয়াতটাও ঠিকঠাকমতোই পৌঁছে যায়। এবারের মেলার উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে মেলায় না আসতে পারার আক্ষেপের কথা বলেছিলেন। সেই একই আক্ষেপ আমাদেরও। করোনার জন্য আমরাও আমাদের প্রিয় নেত্রীকে পাইনি প্রিয় মেলার প্রিয় প্রাঙ্গণে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের মেলায় যে ভাষণ, তাতে আমাদের মনের কথারই অনুরণন ঘটেছে। দ্বিজাতিতত্ত্বকে নাল অ্যান্ড ভয়েড করে যে এক জাতির এক বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত তার গাঁথুনি আর বিকাশ বইমেলাকে বাদ দিয়ে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যে কারণে যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যাদের লক্ষ্যবস্তুই বাংলাদেশ, তারা বরাবরই টার্গেট করেছে এই বইমেলাকেই। বইমেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ড. হুমায়ুন আজাদ থেকে অভিজিৎ রায় এমন অনেক মুক্ত মনের মানুষই। স্বৈরাচারের লাঠির চার্জ থেকেও রেহাই পায়নি একুশের বইমেলা। বইমেলার আবেদনকে খাটো করে দেওয়ার অপচেষ্টায় ঢাকায় প্রায় কাছাকাছি সময় ভিন্ন নামে ভিন্ন আয়োজনে বইমেলা আয়োজনের অপপ্রয়াসও আমাদের স্মৃতিতে আছে। এমনকি করোনার সময়েও আমরা দেখেছি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অজুহাতে বইমেলাকে বন্ধ করার জন্য একদল সো-কল্ড সুশীলের অপচেষ্টাও। এমনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর চড়াই-উতরাই পেরিয়েই বইমেলা আজ অন্য একটি মার্গে উন্নীত হয়েছে। বাঙালীর প্রাণের এই মেলার ওপর সামনে যে আরও আঘাত আসবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে আশার জায়গাটা হচ্ছে, বাঙালীর বইমেলা সম্ভবত সেই আঘাতগুলো কাটিয়ে এবং ঠেকিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত শক্তিটুকু এরই মধ্যে সঞ্চয় করে ফেলেছে। বইমেলার সামনের চ্যালেঞ্জগুলো বহুমাত্রিক। প্রতিবছর মেলায় বহু হাজার বই প্রকাশিত হয়। এবার লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু তারপরও এ কথা অনিবার্য বাস্তবতা যে, ইন্টারনেট আর ই-বুকের আগ্রাসন বইমেলার ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আছে গুণগত মানসম্পন্ন পা-ুলিপির ঘাটতিও। তাছাড়াও প্রতি বইমেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশিত হওয়া মানেই কিন্তু এই নয় যে, সাহিত্যের প্রতিটি ধারায় আমাদের লেখকদের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অনুবাদ সাহিত্যের ওপর জোর দিয়েছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ভাষা শহীদ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের দায়িত্বটা এক্ষেত্রে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা পেশায় সংশ্লিষ্টতার কারণে আমাদের অনুধাবন, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকাশনাতেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন জাতীয় দৈনিকগুলোয় স্বাস্থ্য বিষয়ক যতটা কলাম প্রকাশিত হয় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাইলেক্সটনিক মিডিয়ায় যে পরিমাণ স্বাস্থ্য বিষয়ক টকশো আয়োজিত হয়, সেই অনুপাতে স্বাস্থ্যবিষয়ক বইয়ের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। অর্থাৎ আমরা আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক টকশো আর কলামগুলোকে মলাটবন্দি করায় পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে পারছি না। একটি জাতির বিকাশে যেই মেলাটির এত অবদান, জাতির বিকাশের স্বার্থেই সেই মেলাকে লালন-পালন এবং পোষণ করার পবিত্র কর্তব্যটিও আমাদেরই। সময়ের বিবর্তনে বইমেলার জন্য যে চ্যালেঞ্জ সেগুলো বদলেছে, বেড়েছে অথবা কমেছে। আর সে সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই বাঙালির প্রাণের বইমেলা বাঙালির জন্য অনুপ্রেরণার জায়গা হিসেবে ক্রমেই বিকশিত হয়েছে। এটিই মহান একুশে বইমেলার অতীত এবং বর্তমান। এখন প্রত্যাশা এটুকুই যে, বইমেলার ভবিষ্যৎটাও এমনি রয়ে যাবে। আর আগামীর একুশের বইমেলাগুলো বাঙালির আগামীর অনাগত প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়েই বেঁচে থাকবে। লেখক : ডিভিশনপ্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভে সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ কিছু মানুষ ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন: মির্জা ফখরুল দৌলতপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত লাকসামে ইউএনওর বাদলির আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে মানববন্ধন নাটোরে কাঠের বক্সে ৪ কেজি গাঁজা ডিএনসি’র রাজশাহী চৌকস দলের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দুই জন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত অস্থির চালের বাজার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়! খালেদা জিয়া আজ লন্ডন যাচ্ছেন বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে হইচই নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান, ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ইউক্রেনে শতাধিক ড্রোন হামলা চালাল রাশিয়া ভ্যাট বাড়ালেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না হাহাকার বাসাবাড়ি শিল্পকারখানায় ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহত আরও ৮৮ কুমারখালীতে দুর্ধর্ষ চুরি,টার্গেট ব্রাক অফিস,১০ লক্ষ্য টাকার মালামাল লুট। শেরপুরে ৬৫০ বোতল ভারতীয় মদসহ আটক ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব-১১ এর রোবাস্ট পেট্রোল কার্যক্রম জোরদার