নিউজ ডেক্স
আরও খবর
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়!
ইরান দূতাবাসের ঢাকায় ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটির কথা শুনতে চাই না
মেয়াদ বাড়লো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের
কম্বল কিনতে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা ওয়াসায় পাস ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ
বৈরী আবহাওয়া, দেশজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণ অব্যাহত আছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মাতামুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি, রোপা আমনের বীজতলাসহ মানুষের ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারও মানুষ। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাঙামাটিতে সোমবার ফের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধস আরও ভয়াবহ হতে পারে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে নদীভাঙন রোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এছাড়া মাসজুড়ে ভারী বর্ষণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্ষণের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরের বিস্তারিত-
আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, সোমবার ভোরে জেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া ও উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের দুটি স্থান ধসে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি, রোপা আমনের বীজতলাসহ মানুষের ঘরবাড়ি। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ফুলগাজী-পরশুরাম) মো. মনির আহমেদ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৯টায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘তীর রক্ষা বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে উত্তর বরইয়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, দক্ষিণ বরইয়া, জগৎপুর, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বনিকপাড়াসহ অন্তত ১০ গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শত শত মানুষ।’ ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, ‘মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদনদীর দুই পাশে ১২২ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ আছে। বাঁধের যে কয়েকটি স্থান ভেঙেছে, পানি একটু নেমে গেলে স্থানগুলো মেরামত করা হবে।’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, সোমবার ভোরে তীর রক্ষা বাঁধে ভাঙনের ফলে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া তিন নদীর বেড়িবাঁধের ২০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর দৌলতপুর ও উত্তর বরইয়া অংশে অন্তত ১০ মিটার করে ২০ মিটার ভেঙেছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মোছাম্মদ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। পানিবন্দিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। মেরুং-লংগদু সড়কের দাঙ্গাবাজার মূল সড়ক প্লাবিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বাবুছড়া, কবাখালী, বোয়ালখালী ও মেরুং এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার দুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে জরুরি সেবাকেন্দ্র ও মেরুং, কবাখালী, বোয়ালখালী, বাবুছড়াসহ চারটি ইউনিয়নে খোলা হয়েছে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণের পাশাপাশি সাগর উত্তাল থাকায় এবং আবহাওয়ার ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ থাকায় নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে বাইরের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, ‘হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামগামী স্টিমার, জেলা সদরের সঙ্গে সি-ট্রাক ও ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এমনকি সরকারি ডাক বিভাগের ও কুরিয়ারের মালামাল পরিবহণও বন্ধ হয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
জুরাছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, চার দিনের ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ২০২ হেক্টর জমির রোপা আউশ ধানসহ ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুমদুম্যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, ‘আউশ জুমের রোপিত ধান ক্ষেতে পাহাড় ভাঙার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশিক চাকমা বলেন, ‘প্রবল বর্ষণের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ মাহফুজ আহমেদ সরকার বলেন, ‘আউশ, আমন ও শাকসবজির ২০২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।’
মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় নদীভাঙনের থাবায় পড়েছে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি চাপায় পড়তে শুরু করেছে। নদীভাঙন রোধে কাজ করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তের তথ্য পেতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ে ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাজপাড়া, মুসলিমপাড়াসহ পাহাড় ঘেঁষে থাকা সহস্রাধিক পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে! এদিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন ভাঙনে রাস্তার একাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে! মহামুনি হেডম্যান কার্যালয় সংলগ্ন খালে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন ঝুঁকিতে পড়ায় সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ! এ খবরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সিন্দুকছড়ি ৩ ফিল্ড রেজিমেন্টে আর্টিলারির জোন কমান্ডার সৈয়দ পারভেজ মোস্তফা পিএসসি জি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা। পরে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ও ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় অস্থায়ীভাবে খালের ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলার চার ইউনিয়নে ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র ও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি জানান, টানা ৪ দিনের প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে নাইক্ষ্যংছড়ির আগাম রবিশস্য। একই সঙ্গে উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নে বুছি খালে পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে গেছেন ম্রো পাড়ার বাসিন্দা ঐবরাত ম্রোর পুত্র মেমপয়ই (৩০)। সোমবারও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও রোমেন শর্মা।
উপজেলা প্রশাসন ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখে পুরো উপজেলায় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সতর্ক থাকতে মাইকিং করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় চলমান দুর্যোগে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন ও জনগণের পাশে থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ইউএনও বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই নাইক্ষ্যংছড়িতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। প্রাণহানির শঙ্কায় পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ঘুমধুমে ২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। আর জরুরি এ অবস্থায় ২ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।’
রাঙামাটি ও নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটিতে ফের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে গত কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢল আর ঘন বর্ষায় রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে ধস নেমেছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের রাবার বাগান এলাকায় রাস্তার ওপর পাহাড়ের মাটি ও গাছ ভেঙে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তা অপসারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাঙামাটি শহরের সওজ গোডাউন এলাকায় একটি বসতবাড়ি ভেঙে পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। সড়কে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে কাপ্তাই সড়কে যোগাযোগ বন্ধ ছিল বেশ কিছুক্ষণ। শহরের লোকনাথ মন্দির এলাকায়ও একটি কাঁচা ঘর ভেঙে পড়ে। এছাড়া বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসের সংবাদ পাওয়া গেলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
রাঙামাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জানান, ‘রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাউখালীতে পাহাড় ধসের কারণে চলাচল কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের সহায়তায় তা দ্রুত অপসারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাহাড় ধসের কারণে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।’
টানা বর্ষণের ফলে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের জন্য শহরের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সতর্ক করার জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, প্রবল বর্ষণে সড়কের পাশের মাটি ও পাহাড় ধসের পাশাপাশি বৃষ্টির পানিতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে এসব সড়কে প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত যানবাহন। রাঙামাটির রাজস্থলী-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া প্রধান সড়কের ৩৫ কিলোমিটারে অন্তত ১০টি পয়েন্টে পাহাড়ধস হয়েছে। এসব এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাউফল (পটুয়াখালীর) প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়া ও গভীর সমুদ্রে আশানুরূপ ইলিশের দেখা না মেলায় হতাশায় পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়ার ঠিক দুই দিনের মাথায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে লোকসানের মুখে সামুদ্রিক মাছ আহরণের সঙ্গে জড়িতরা।
মৎস্য বিভাগ বলছে, গত মৌসুমের তুলনায় এবার বেশি ইলিশ আহরণ সম্ভব হবে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে এলেই আবারও শিকারে গভীর সমুদ্রে যাবেন জেলেরা।
এদিকে সমুদ্র উত্তাল থাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে তীরে ফিরছে মাছ ধরার শত শত ট্রলার। যার ফলে বাউফল উপজেলার গ্রাম ও শহরের বাজারে নেই ইলিশের দেখা।
বরিশাল অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয় থাকায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জনজীবন যেমনিভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তেমনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর। বরিশাল নগরীর বেশিরভাগ সড়কই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে ভরা জোয়ারের কারণে সড়কগুলোতে পানির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে।
সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো পানির নিচে চলে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ফুটপাত ছাড়িয়ে দোকানপাট ও বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষকে বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। সড়কগুলোতেও যানবাহনের চাপ তেমন একটা নেই। টানা বৃষ্টিতে শ্রমজীবীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বৃষ্টিতে তেমন একটা কাজ না থাকায় আয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে তাদের।
সোমবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ জানান, সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্তই ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আষাঢ় মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। এ আবহাওয়া আগামী ৪৮ ঘণ্টা বিরাজ থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা দিয়েছেন।
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পর্যটকরা হোটেল থেকে বের হতে পারছেন না। আবার যারা বের হচ্ছেন তারাও বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারছেন না। সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ পর্যটকরা রুমে অবস্থান করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন পুলিশ পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে কুয়াকাটা কিছুটা পর্যটক কমেছে। তবে যারা এই মুহূর্তে কুয়াকাটা অবস্থান করছেন তারা সবাই চাইলেও দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারছেন না। এবং সমুদ্র উত্তাল থাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় সাগরে গোসল করতেও নিষেধ করা হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে।’
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, নিম্নচাপের ফলে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে সুন্দরবন সংলগ্ন নদনদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ বাজার স্লুইচ গেট দেবে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে খোলপেটুয়া ও চুনা নদীর জোয়ারের পানির তীব্র স্রোতে স্লুইচগেটটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিজিবি নীলডুমুর ক্যাম্প, নৌ-থানা, বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট ক্যাম্পসহ এলাকাবাসী।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।