নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচার বিভাগ থেকে যেন কোনো অবিচার না হয় : আইন উপদেষ্টা
গার্মেন্টস খাতে অস্থিতিশীলতায় প্রতিবেশী দেশের ইন্ধন: শ্রম সচিব
হত্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সরকারি কলেজের দাপুটে শিক্ষক মহোদয়দের অনৈতিক কার্যকলাপ
ত্রাণ নিয়ে মানুষ ছুটছে টিএসসিতে
ভারতের বাঁধ ভাঙা পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
ভ্রমণ বন্ধ তবু প্রশিক্ষণে নিচ্ছেন ডলার
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে সরকারি খরচে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ রয়েছে। তবে বিদেশি সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ও খরচে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এক্ষেত্রে এভাবে প্রশিক্ষণে গেলেও কর্মকর্তারা সরকারি ফান্ড থেকে ডলার নিচ্ছেন। তাদের পকেটখরচ বাবদ মোট খরচের ৩০ শতাংশ অর্থ ডলারে পরিশোধ করা হচ্ছে। পকেটখরচের টাকা ২০১৫ সালে অর্থ বিভাগ থেকে জারি পরিপত্রের আলোকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছর ৯ নভেম্বর পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা অর্জনে কোনো বাধা থাকবে না বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। আর সেই সুযোগেই বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ১০ মাসে ৪৫০ কর্মকর্তা বৈদেশিক প্রশিক্ষণে গেছেন বলে জানা গেছে। তাদের প্রত্যেককে পকেট মানি হিসাবে ৩০ শতাংশ অর্থ ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৪২ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের খরচে প্রশিক্ষণে গেলেও সরকার কর্মকর্তাদের হাতখরচ বাবদ অর্থ দিচ্ছে। একজন কর্মকর্তাকে স্বাভাবিক সময়ে বিদেশ সফরে প্রতিদিনের খরচ বাবদ সরকারিভাবে যে পরিমাণ ডলার দেওয়া হয়, এর ৩০ শতাংশ অর্থ ডলারে নিচ্ছেন প্রশিক্ষণে যাওয়া কর্মকর্তারা। ফলে সংকটে পড়ে ডলার সাশ্রয়ের জন্য বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো তা আর করা গেল না।
২০১৫ সালে অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির বিশেষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরের সময় দৈনিক থাকাখাওয়া বাবদ ২৬৩ ডলার পেয়ে থাকেন। এখন তারা বিদেশে প্রশিক্ষণে গেলে হাতখরচ পাচ্ছেন ৩০ শতাংশ হারে ৭৯ ডলার। ‘ক’ শ্রেণির কর্মকর্তারা থাকাখাওয়া বাবদ দৈনিক ১৯৬ ডলার পেয়ে থাকেন। এখন ৩০ শতাংশ হারে ৫৯ ডলার হাতখরচ পাচ্ছেন। ‘খ’ শ্রেণির কর্মকর্তারা বিদেশ সফরের সময় থাকাখাওয়া বাবদ পান ১৭৮ ডলার। এখন প্রশিক্ষণে গেলে হাতখরচ পাচ্ছেন ৩০ শতাংশ হারে ৫৩ ডলার। ‘গ’ শ্রেণির কর্মকর্তারা থাকাখাওয়া বাবদ পেয়ে থাকেন ১৬৫ ডলার। এখন প্রশিক্ষণে হাতখরচ পাচ্ছেন ৩০ শতাংশ হারে ৫০ ডলার এবং ‘ঘ’ শ্রেণির কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে থাকা-খাওয়া বাবদ ১৩১ ডলার পেয়ে থাকেন। এখন ৩০ শতাংশ হারে হাতখরচ পাচ্ছেন ৩৯ ডলার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ) ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, দেশের প্রয়োজনে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব এখন একটি পরিবারের মতো। সব রাষ্ট্র ও সরকারকে নিয়ে চলতে হয়। এখন উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অনেকটা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় নানা বিষয়ে কর্মকর্তাদের নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। সেক্ষেত্রে বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারের খরচে আমাদের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
জিয়াউল হক আরও বলেন, বিদেশে এমন অনেক প্রশিক্ষণ রয়েছে আমন্ত্রণকারী দেশ শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। প্রশিক্ষণ দেয়। কিন্তু বাড়তি কোনো টাকা দেয় না। সেক্ষেত্রে বিদেশি সরকার ও রাষ্ট্রের আমন্ত্রণে গেলেও সরকার কর্মকর্তাদের দৈনিক মোট খরচের ৩০ শতাংশ অর্থ হাতখরচের জন্য দিচ্ছে। আবার অনেক দেশে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি হাতখরচের জন্য কিছু টাকা দেয়-সেক্ষেত্রে সরকার কর্মকর্তাদের পকেটখরচ বাবদ কোনো টাকা দেয় না।
জিয়াউল হক আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে সরকারি খরচে বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। তবে এমন কিছু প্রশিক্ষণ রয়েছে, যার একটি অংশ বাংলাদেশে, অপর অংশ বিদেশে গিয়ে করতে হয়। ধরুন, একটি প্রশিক্ষণ ৬ সপ্তাহের। এ ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৫ সপ্তাহ দেশে এবং এক সপ্তাহ বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এমন প্রশিক্ষণে এক সপ্তাহের জন্য সরকার কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠাচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও চীন প্রশিক্ষণের জন্য যাতায়াত, থাকাখাওয়ার খরচ বহন করে। কিন্তু হাতখরচের টাকা দেয় না। আবার ইউরোপের দেশগুলো কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রশিক্ষণে গেলে কর্মকর্তাদের যাতায়াত, থাকাখাওয়ার পাশাপাশি হাতখরচের জন্য সম্মানজনক অর্থ দেয়। এমনকি জাপানিরাও প্রশিক্ষণ থাকাখাওয়া, যাতায়াতের খরচ বহন করে। পাশাপাশি হাতখরচের বাড়তি কিছু অর্থ দিয়ে থাকে। একজন কর্মকর্তা বিদেশ যাবেন এবং প্রশিক্ষণ নেবেন-পছন্দের টুকিটাকি কেনাকাটা করবেন না, এটা বেমানান। তাই বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে প্রশিক্ষণে গেলেও সরকার কর্মকর্তাদের ৩০ শতাংশ পকেটমানি দিচ্ছে। এতে সামান্য কিছু ডলার খরচ হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়মিত বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ২ জুলাই জারি করা এক আদেশে ভারতের দিল্লিতে ১৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণে গেছেন ৫০ কর্মকর্তা। তারা ১৭ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। তাদের অনুকূলে মোট খরচের ৩০ শতাংশ অর্থব্যয়ে জিও জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।