সংখ্যানুপাতের নির্বাচন কেন অনুকরণীয় – দৈনিক গণঅধিকার

সংখ্যানুপাতের নির্বাচন কেন অনুকরণীয়

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৩ আগস্ট, ২০২৩ | ৮:৩১
ইসরাইল সারা বিশ্বে একই সঙ্গে একটি পরিচিত, নিন্দিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভয়ংকর নাম। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরাইল নিজ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হেন কাজ নেই যা করেনি। নিজ দেশের স্বার্থে ইসরাইল ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেশের বা ঘনিষ্ঠজনের ওপরও মারাত্মক ব্যবস্থা নিতে সামান্য দ্বিধাবোধ করে না। এ দেশটির আয়তন ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিন, জর্ডান, সিরিয়া, মিসর প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশের ভূমি দখল এবং নিজ নিরাপত্তা বজায় রাখতে তার ব্যবহার ইসরাইলের বিশেষ নীতি। দেশটি বিশেষত সিরিয়ার গোলান হাইটস এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূমিতে বসতি স্থাপন করে নিজ দেশের মানচিত্র সংশোধন করছে। সম্ভবত ইসরাইলই একমাত্র দেশ, যে তার প্রতিবেশীর ভূমি দখলের পরও কোনো দেশ থেকে বাধার মুখোমুখি হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরাইল ইহুদি রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সারা পৃথিবীর যে কোনো ইহুদি ইচ্ছা করলে ইসরাইলে বসবাস করতে পারে। নাগরিকত্ব নিতে পারে। বলা হয়, আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের পরই সামরিক শক্তিধর ইসরাইল। দেশটি তার সমরশক্তিকে প্রযুক্তিনির্ভর করেছে। এমনকি তার পরমাণু শক্তিকেও যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে। ইসরাইল কীভাবে, কোথা থেকে পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়, তা কেউ আলোচনা করে না। জেনেও প্রশ্ন তোলে না। নিজ ভূখণ্ডের বাইরে অন্য দেশেও তার শত্রু বলে বিবেচিত হলে কাউকে আঘাত করতে সামান্য সময়ও নেয় না দেশটি। ইসরাইলের সব কাজে সেদেশের মানুষের মধ্যে একটা আশ্চর্য রকম সম্প্রীতি বা মিল আছে। তবে সরকার গঠন, নিজ দেশের নির্বাচন, নিজ নাগরিকদের মানবাধিকার নিশ্চিতে তারা কাউকে ছাড় দেয় না। সেই ১৯৪৮ সাল থেকে কোয়ালিশনের নড়বড়ে অথচ প্রচণ্ড ক্ষমতাধর শক্তি হিসাবে ইসরাইল সরকার দায়িত্ব পালন করছে। ইসরাইলের আইনসভা knesset (হিব্রু শব্দ), যার অর্থ অ্যাসেম্বলি। এর মেয়াদ ৪ বছর। সংখ্যাভিত্তিক ভোটের গণনায় তাদের আইনসভার সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হয়, যা D Hondt পদ্ধতি নামে বিশ্বে পরিচিত। ইসরাইল ছোট দেশ হলেও তার রপ্তানি আয় ২০০২ সালে ছিল প্রায় ১৬৬ বিলিয়ন ডলার। ইসরাইলের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২০১-৬৯৪ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরাইলকে বিশ্বের ষষ্ঠ রাজনৈতিক ক্ষমতাধর দেশ, যা অন্যান্য দেশকে প্রভাবিত করতে পারে বলে বিশ্বাস করে। তাবৎ দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে এদেশের স্থান প্রথম। যেহেতু ইসরাইল বিশ্বের প্রায় সব দেশের বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরে থাকে, সেহেতু দেশটিকে অপছন্দ করলেও সংবাদমাধ্যমে তার স্থান প্রথমদিকে। ইসরাইলের অর্থনীতি মজবুত। দেশটিতে রয়েছে তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান-ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমান। ইসরাইল অত্যন্ত আধুনিক; এর অবকাঠামো সুন্দর, সবল ও দৃষ্টিনন্দন। সবচেয়ে আশ্চযর্জনক হলো, ইসরাইল সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে উন্নয়ন টেকসই, আধুনিক ও নিজ দেশের জন্য কল্যাণকর হয়। বলা হয়, পৃথিবীর দুটি ক্ষুদ্র দেশের রয়েছে সবচেয়ে আধুনিক ও বড় বহরের বিমান। এ দুটি দেশ হলো সিঙ্গাপুর ও ইসরাইল। দুটি দেশই অত্যন্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি দ্বারা পরিচালিত। যারা দেশের প্রতিটি ডলারের হিসাব জনগণের কাছে দিতে বাধ্য। দুটি দেশই ‘সম্মুখমুখী’; ২০/৩০ বছর সামনে রেখে তাবৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর করে। আমেরিকান কোম্পানিগুলো যেমন-ইনটেল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল তাদের রিসার্চ কর্মকাণ্ড ইসরাইলেই সম্পন্ন করে। দক্ষ মানবসম্পদের জন্য ইসরাইল পৃথিবীর ৪০০টির অধিক হাই-টেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি যেমন-আইবিএম, গুগল, হিউলেট পেকার্ড, সিসকো সিসটেম, ফেসবুক, মটরোলা ইত্যাদির ‘আর অ্যান্ড ডি’ দপ্তর স্থাপন করেছে। ইসরাইলের নির্বাচন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। ১৮ বছরের বেশি বয়সি নাগরিক নির্বাচনের যোগ্য হন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি দেশের নির্বাচন পরিচালনা করে। নির্বাচনে ভোটের ব্যবস্থাও চমৎকার। ইসরাইলি জাহাজগুলোয়ও ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। বিদেশে অবস্থানকারীরা দেশে এসে ভোট দেন। স্বাভাবিক অবস্থায় ইসরাইলে পার্লামেন্ট নির্বাচন চার বছরের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। তবে যে কোনো পলিসি বিষয়ে সংঘাতের আশঙ্কা হলেই তারা নির্বাচনে যায়। জনমত জরিপে তাতে অনেকে হারে, অনেকে আবার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ফেরত আসে যেনতেনভাবে; পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা ইসরাইল, তুরস্ক, জার্মানি এসব দেশে নেই। ইসরাইলে ব্যক্তি নয়, বরং পার্টিভিত্তিক নির্বাচন হয়। যে দল যত ভোট পায়, আনুপাতিক হারে সে ততটি আসন লাভ করে। এভাবেই আইনসভা গঠিত হয়। তবে কোনো দল মোট ভোটের ৩.২৫ শতাংশ না পেলে আসন লাভের জন্য গণ্য করা হয় না। নির্বাচনে কারচুপি অথবা সরকারি বা বিশেষ দলকে সহায়তা করার কথা শোনা যায় না। সরকারি কর্মকর্তারা কখনো কোনো প্রার্থীর জেতার জন্য অনৈতিক কোনো কাজও করেন না। আর সেদেশের নির্বাচনের বিষয়ে মানুষ দেশের প্রয়োজন, নিজেদের সুরক্ষা এবং দেশের উন্নতিকে বিপুল প্রাধান্য দেন। ইসরাইলে বেকার সমস্যা সমাধানের প্রধান খাত হলো সার্ভিস সেক্টর, প্রায় ৮১.৬ শতাংশ। দেশটির বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, যে কোনো বিষয়ে যে কাউকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিতে পারে। ইসরাইলে বিচারপতি নিয়োগ হয় জুডিশিয়াল সিলেকশন কমিটি দ্বারা, যেখানে তিনজন বিচারক, দুজন বার কাউন্সিলের সদস্য, দুজন আইনসভার সদস্য থাকেন। বিচারমন্ত্রী এ কমিটির প্রধান থাকেন। ইসরাইলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ছাড়াও পৃথক ধর্মাবলম্বীদের জন্য রিলিজিয়াস কোর্ট, লেবার কোর্ট এবং কোর্ট অব অ্যাডমিরালটি বিদ্যমান। এতে করে এসব কোর্ট বিশেষ ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং দ্রুত বিচারকার্য সম্পাদনে অবদান রাখে। তাদের যে উন্নয়ন তা নিজস্ব জনগণের জন্য, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়-তারা অন্যের ওপর, বিশেষত ফিলিস্তিনিদের ওপর অবিচার ও দখলদারি করে। এটি শুধু নিন্দনীয় নয়, বর্জনীয়ও বটে। আরবরাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ইসরাইল এত অন্যায় করেও টিকে আছে বস্তুত তার নির্বাচন ও সরকার পদ্ধতির সফলতার জন্য। সংখ্যানুপাতের নির্বাচন ইসরাইল ছাড়াও তুরস্ক, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকে ইসরাইলের দ্রুত উন্নয়ন ও যুদ্ধের মধ্যেও টিকে থাকাকে সংখ্যানুপাতের আইনসভার গুণগত সাফল্য বলে মনে করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ পদ্ধতিতে ক. পার্টির শৃঙ্খলা বজায় থাকে, খ. নির্বাচনে প্রার্থীর কারচুপি করার চেষ্টা থাকে না, গ. একজন প্রার্থীর নামে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রবণতা কম থাকে, ঘ. প্রার্থী নিজে নমিনেশন না পেলে দলত্যাগের মতো ঘটনা ঘটে না, ঙ. জয়লাভের জন্য এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাস ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ আদায়ের চেষ্টার প্রয়োজন পড়ে না, চ. জয়লাভের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে অসৎ পন্থার ব্যবহার ও শক্তি প্রয়োগের দরকার হয় না, ছ. ছোট দলেরও দু-একটি আসন পাওয়ার এবং যোগ্য প্রতিনিধি আইনসভায় প্রেরণের সুযোগ থাকে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো-আইনসভায় আইন প্রয়োগ, সরকার গঠন ইত্যাদিতে একটি দলের একচ্ছত্র প্রভাব চিরতরে শেষ হয়ে যায়। সংখ্যানুপাতের নির্বাচন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে শুধু আইনসভাকে নয়, দেশকে রক্ষা করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম : তুরস্কে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সামরিক অ্যাটাশে jahangir010754@gmail.com

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দৌলতপুরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র‍্যালি ও পথসভা কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে অনুষ্ঠানের বাড়িতে মারামারি সাবেক সদস্য প্রীতি সমাবেশ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যুদ্ধ-পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে বললেন ড. ইউনূস ভরিতে ২ হাজার টাকা বেড়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম ‘বাজারে সিন্ডিকেট থাকলে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’ কারাগারে থাকা সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ‘ভাইরাল’যা বলল কারা অধিদপ্তর ৪৮ ঘণ্টায় ১০০-র বেশি কম্পন, বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা শেরপুরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ কবিতা – বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যে কারণে ভারতকে আর ছাড় দেবে না বিজিবি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া হবে যে শর্তে! সীমান্ত হত্যা বন্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ! আমেরিকা দখল কেন অসম্ভব? নির্বাচনে বিএনপি ডাকলে দেশে ফিরবেন মেজর ডালিম, রাশেদরা? ইবি ডিবেটিং সোসাইটির আহবায়ক ইরানী, সদস্য সচিব দিদারুল সাবেক ২ নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শালিখায় ৩০পিচ ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারি আটক কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন