নিউজ ডেক্স
আরও খবর
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল কোথায়!
ইরান দূতাবাসের ঢাকায় ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটির কথা শুনতে চাই না
মেয়াদ বাড়লো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের
কম্বল কিনতে ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়
মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
ঢাকা ওয়াসায় পাস ব্যাতীত প্রবেশ নিষেধ
সেরনিয়াবাত পরিবারেই আ.লীগের মনোনয়ন
বরিশালের বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রায়ই বলে থাকেন তার তিনপুরুষের রাজনীতি করার কথা। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের মনোনয়ন পাওয়ার মাধ্যমে তাদের পুরুষানুক্রমিক ধারাটিই টিকে রইল।
মেয়র পদে খোকনের মনোনয়ন নিয়ে বরিশালে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না সাদিক অনুসারী বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। ১২ জুনের সিটি নির্বাচনে খোকন ভোটযুদ্ধে জয়ী হলে সেটি হবে সেরনিয়াবাত পরিবারের জন্য আরেকটি বড় অর্জন।
রাজনীতিতে নেমেই ছক্কা হাঁকানোর মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন খোকন সেরনিয়াবাত। এ মনোনয়নের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী সেরনিয়াবাত পরিবারের নিয়ন্ত্রণেই রইল বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতি। পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় থাকা বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পাশাপাশি খোকনও সক্রিয় হবেন দলীয় কর্মকাণ্ডে। এদিকে চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের ব্যাপারে ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর মনোভাব এখনো পরিষ্কার নয়। খোকনের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে সাদিক বা তার অনুসারীরা কতটা আন্তরিকভাবে নামবেন, এ সম্পর্কেও বলা যাচ্ছে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বোন আমেনা বেগমকে বিয়ে করেন বরিশালের প্রখ্যাত কৃষকনেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। ১৫ আগস্ট তার মৃত্যুর পর বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। প্রথমে এমপি এবং পরে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ হন তিনি। বর্তমানে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন হাসানাতের বড় ছেলে সাদিক। ধারণা করা হচ্ছিল-রব সেরনিয়াবাত এবং হাসানাত আবদুল্লাহর পর এ রাজনৈতিক পরিবারের প্রতিনিধিত্ব যাচ্ছে সাদিকের হাতে। সাদিক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ায় সে ধারণা আরও জোরালো হয়। কিন্তু শনিবার ঘোষিত দলীয় মনোনয়নে খানিকটা হলেও সেই ধারণায় ধাক্কা লাগল। সাদিকের স্থলে তার ছোট চাচা খোকন মনোনয়ন পেলেন। এ মনোনয়ন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, সাদিক আবদুল্লাহর জন্য আমরা মনোনয়ন চেয়েছি এটা ঠিক। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। নৌকার বিজয় নিশ্চিতের লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠে নামব।
কী কারণে দলীয় মনোনয়ন পেলেন না সাদিক আবদুল্লাহ-এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে এক টাকাও সরকারি বরাদ্দ পাননি সাদিক। এরপরও তিনি বরিশালকে রেখেছেন সাজিয়ে-গুছিয়ে। নগর ভবনের আয়বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে তিনি নগরী পরিচ্ছন্ন ও বাস উপযোগী করেছেন। একাধিক পার্ক, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বদ্ধভূমিকে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারকে নান্দনিক রূপ দিয়ে তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। এরপরও তার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এর একটি হলো-রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা হওয়া সত্ত্বেও খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনীতিতে প্রাপ্তি বলতে কিছুই নেই। অথচ ১৫ আগস্ট তার শরীরও ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ হয়েছে। সেই বুলেটের ক্ষতচিহ্ন তিনি এখনো বয়ে বেড়ান। জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দলের কাছে তিনি কিছু চেয়েছেন।
সাদিকের মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ থাকতে পারে। আর তা হলো-তার জনবিচ্ছিন্নতা। চাইলেই কেউ মেয়র সাদিকের সঙ্গে দেখা বা কথা বলতে পারতেন না। মোবাইল ফোনেও তাকে কখনোই পাওয়া যায় না। তিনি না চাইলে তার অবস্থান সম্পর্কেও কেউ জানতে পারতেন না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রে বিরূপ মেসেজ যায়। তবে এমনও হতে পারে-ভবিষ্যতে বড় কোনো দায়িত্বের জন্য তাকে ভারমুক্ত রাখতে চাইছে দল।
মাস দুয়েক আগে নগরীর কালু শাহ সড়কে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন খোকন সেরনিয়াবাত। সমুদ্রবন্দরকেন্দ্রিক বিদেশগামী পণ্যবাহী জাহাজ নিয়ে তার ব্যবসা। খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ১৯৮০-৮১ সাল থেকে বিদেশগামী পণ্যবাহী জাহাজের ব্যবসা করি। হালাল রুজি উপার্জন করছি। জাতির পিতার ভাগিনা পরিচয়ে কোথাও কোনো ক্ষমতা দেখিয়েছি বা প্রভাব খাটিয়েছি, তা কেউ বলতে পারবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন আর চাওয়াপাওয়ার কিছু নেই, তখন মানুষের সেবা করে কাটাতে চাই।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই হতে পারতাম। আমি সাদাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। নৌকার মেয়রপ্রার্থী খোকন বলেন, নির্বাচিত হলে জনগণের মাঝেই থাকব। আমাকে পেতে কখনোই কারও কোনো কষ্ট হবে না। দায়িত্ব পেলে বরিশালকে মডেল নগরী করার ইচ্ছা আছে। বাকিটা বরিশালের মানুষ এবং মহান আল্লাহর হাতে।
বরিশালে খোকন সমর্থকদের আনন্দ মিছিল : বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র পদে খোকন সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় শহরে দুটি আনন্দ মিছিল করা হয়েছে। নগরীর আমতলা মোড় থেকে শনিবার দুপুরে মিছিলটি বের হয়ে অশ্বিনীকুমার হল চত্বরে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম দিপুসহ খোকন সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এছাড়া নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকা থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। এ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক সহসভাপতি মঈন তুষার প্রমুখ।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।