হাসির আওয়াজ শোনা যায়
আজকাল ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার কারণে বই পড়ার সুযোগ তেমন একটা হয় না। তবুও মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই একটু বই নিয়ে বসার ইচ্ছে হয়। সেদিন নবীগঞ্জের বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক পৃথ্বীশ চক্রবর্তীর উপহার দেওয়া ‘হাসির আওয়াজ শোনা যায়’ বইটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করি। বইটিতে মোট সাতটি গল্প স্থান পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে। প্রতিভা প্রকাশ এটি প্রকাশ করেছে। ৬৪ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির প্রচ্ছদশিল্পী সঞ্জিব রায়। মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ টাকা।
গ্রন্থটির প্রথম গল্প ‘হাসির আওয়াজ শোনা যায়’- মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গ্রামের হিন্দু জনসাধারণকে একজন ধার্মিক ও মানবতাবাদী মুসলিম ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের জীবনের তোয়াক্কা না করে
বাঁচিয়েছিলেন দেশীয় রাজাকার বাহিনী ও পাঞ্জাবিদের হাত থেকে। এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধের এমনই একখ- বাস্তব ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে সাবলীলভাবে।
দ্বিতীয় গল্প ‘পত্রিকা’- লেখকের খবরের কাগজ পড়ার নেশা থেকেই সৃষ্টি। এবং করোনাকালে খবরের কাগজের প্রিন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লেখক যে দমবন্ধ অশান্তির মধ্য দিয়ে করোনাকালীন দিনগুলো অতিবাহিত করছিলেন তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে দারুণ নাটকীয়তা আছে, পাঠক পাঠে বুঝতে পারবেন। তৃতীয় গল্প ‘হকার’ একজন পত্রিকা বিক্রেতার সঙ্গে লেখকের হৃদ্ধিক সম্পর্ক, হকার কতটুকু বড়মনের হলে তার পত্রিকাগুলো বিনে পয়সায় পড়ার সুযোগ দিত এবং বাস দুর্ঘটনাজনিত কারণে হকারের মৃত্যুতে লেখক তার পরিবারের পাশে কিভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, এমনকি তার জন্য শোকসভা পর্যন্ত করেছিলেন, এসব চিত্র এই গল্পে বাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরেছেন। গল্পটি পড়ুন, হকারের মৃত্যু শোকে মনের কান্না থামাতে পারবেন না।
চতুর্থ ‘আদরের বাবলা’ লেখকের একটি রসাত্মক গল্প। এটি লেখকের একজন প্রিয় ছাত্রের ছোট-বেলা নিয়ে লিখা, যে কি-না ছোট বেলায় লেখাপড়ায় ভালো না হয়েও পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিল। এটি প্রকৃতির বিধান। কখন কার মেধা বিকশিত হয় বলা যায় না। বাবলা চরিত্রটিকে অত্যন্ত হাস্যরসের মধ্য দিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন গল্পকার।
পঞ্চম গল্পটি ‘বলি বলি বলি করে বলা হলো না’ হলো একটি অসম ভালোবাসার কাহিনী। যার মধ্যে প্রেম আর বিরহ দুটিই সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
ষষ্ঠ গল্প ‘শেষ দেখা’। এটিও একটি সুপ্ত প্রেম কাহিনী। ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুইয়ের মধ্যবর্তী জায়গায় অন্তরের গুপ্ত কামনা সুপ্তই রয়ে যায়; যা স্পষ্টভাবে সহজ-সরল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রন্থের শেষ গল্পটি ‘সাগর-নদী’। এই গল্পটিতে গ্রামীণ কয়েকটি চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। প্রেম ভালোবাসার এই কাহিনীটি অপূর্ব।
যাই হোক এতক্ষণ লেখকের গল্পগুলো সম্পর্কে ক্ষুদ্র পরিসরে আলোকপাত করলাম, এ পর্যায়ে একটি বিষয়ে সমালোচনার দাবি রাখি। গল্পগুলোতে হাস্যরস, আনন্দ-বেদনার চিত্র ফুটে উঠেছে ঠিকই কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞায় গেলে যেটি বলতে হয়-‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গকরি মনে হবে, শেষ হয়েও হইল না শেষ’। এই জায়গায় ঘাটতি রয়েছে অনভুব করেছি। আশা করছি পরবর্তী লেখাগুলোতে পৃথ্বীশ চক্রবর্তী আরও হাস্যকর এবং বাস্তব জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তুলবেন। কথাসাহিত্যিক পৃথ্বীশ চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।