
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ইসলামের দৃষ্টিতে বাজেট

যেসব কারণে রোজার ক্ষতি হয় না

কুরআনের সপ্তম পারায় যা যা আলোচনা হয়েছে

দেশ ও সংস্কৃতি ভেদে রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত, যা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না। বেশিরভাগ রোজাদারের ইফতারে তেলে ভাজা এবং সেহরিতে ভারী খাবারের প্রাধান্য থাকে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও পুষ্টিবিদদের মতে, অস্বাস্থ্যকর সেহরি ও ইফতার নানা রোগ-ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে এ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। তাদের পরামর্শ-দিনভর রোজা রেখে শরীরে যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে তা পূরণে সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে যথেষ্ট পানি পানে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণত রমজানে সেহরি ও ইফতারকে কেন্দ্র করে বাহারি খাবার বিক্রি বেড়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খোলা বাজারে অস্বাস্থ্যকর ও তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার বিক্রির ধুম পড়ে। বেগুনি, পিঁয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলা, সবজি চপ, বুন্দিয়া ছাড়াও স্পেশাল আইটেম হিসাবে হালিম বিক্রির হাঁকডাক চলে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার চকবাজারে ইফতার, সেহরির জন্য তৈরি অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত গুরুপাক খাবার যেন দেশীয় সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের খাদ্য তালিকায় প্রসেস ফুড কিংবা ফাস্টফুডও যুক্ত হতে দেখা যায়। অনেকে খোলা বাজারে তৈরি অস্বাস্থ্যকর শরবত, জুস, কোমল পানীয় পানে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দিন রোজা রাখার পর ভাজা-পোড়া খাবার গ্রহণে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ভাজা-পোড়া খাবারগুলো শরীরের শিরা-ধমনিতে চর্বির পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। এতে বুকে ব্যথা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। খোলামেলা নোংরা পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি হওয়া খাবারে ডায়রিয়ার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘক্ষণ রোজা রেখে শরীরে এমনিতেই পানির ঘাটতি থাকে। অনেকে ইফতারে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত, কোমল পানীয় কিংবা বাজারের প্যাকেটজাত শরবত পান করেন। কেউ ইফতার শেষে চা, কফি, অ্যালকোহলও পান করেন। কেউ মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত শরবত খেলে কোষরে পানি শুষে নেয়, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে অবসাদ, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। যারা ওজনাধিক্যে ভুগছেন তারা চিনিযুক্ত শরবত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, রোজায় অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে ট্রান্সফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। এতে অ্যাসিডিটি, গ্যাসের সমস্যা, কনস্টিপেশন (কোষ্ঠকাঠিন্য) ও আলসার হতে পারে। রোজা রেখে একাধিক ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার খেলে শরীরে ইউরিক এসিড বাড়ে। কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্তের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রমজান মাসে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে কিছু খাদ্যাভাস আছে। বিক্রেতারা রাস্তাঘাটের পাশে তেলে ভাজাসহ নানা পদের মিষ্টিজাতীয় ও ভারী খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন। এগুলো খাওয়ায় নিষেধ নেই, তবে বাইরে খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে তৈরি করে পরিমিতভাবে খাওয়া উত্তম। সেহরির ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলবেন। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখায় শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালান্স হয়। ফলে ইফতারে ট্র্যাডিশনাল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে বুক ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম ঝরা, মাথাঘোরা, হাইপোগ্লাইসোমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া) হতে পারে। বিশেষ করে হার্ট ও ডায়াবেটিস রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, ইফতারে ডাবের পানি পানে শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ঘাটতি পূরণ করে সাহায্য করে। অনেকে পলিথিনে ভরে ডাবের পানি কেনেন। ফুডগ্রেডহীন পলিথিনে থাকা প্লাস্টিক ন্যানো পার্টিকেল পানির কার্যকারিতা একেবারেই নষ্ট করে ফেলে। ওই পানি পানে ক্যানসার, অটিজমসহ বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেহরিতে কী খাবেন : পুষ্টিবিদদের মতে, সেহরি হতে হবে সুপাচ্য, সহজে হজমযোগ্য, পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ সুষম খাবারের সমন্বয়। খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে যেমন-প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার। সম্ভব হলে লাল চালের ভাত কিংবা লাল আটার রুটি খেতে পারলে ভালো। শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা শাক-সবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। ইফতারে খাবার কেমন হবে : ইফতারে অবশ্যই একটি অথবা দুটি খেজুর খাওয়া উচিত। খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এবং যথেষ্ট পরিমাণে ডাইটারি ফাইবার। খেজুরের ইনস্ট্যান্ট সুগার বা চিনি ক্লান্তি দূর করে। স্বাভাবিক পানি ও পানি জাতীয় খাবার, দই, চিড়া, কলা, সবজি খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। শসা কুচি, গাজর, টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা ও সরিষার তেল দিয়ে সালাদ করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া মৌসুমি তাজা ও মৌসুমি ফল গ্রহণে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বায়তুল মোকাররমে খতমে নবুওয়তের সমাবেশ

জান্নাত লাভে মুমিনের আত্মত্যাগ
ইফতারে কোন দেশে কী খাওয়া হয়?

রমজান হলো সবচেয়ে পবিত্র মাস। এই মাসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাসব্যাপী রোজা রাখেন। পুণ্য অর্জন ও আত্মশুদ্ধির আশায় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা পানাহার থেকে বিরত থাকেন। মাগরিবের আজান শুনে মুখে খাবার তুলে রোজা ভাঙেন। রোজা ভাঙার এ সময়কে বলা হয় ‘ইফতার’।
জনসংখ্যা বিষয়ক অনলাইন ডেটাবেজ ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ (ডব্লিউপিআর) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২০০ কোটি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ নিয়মিত রোজা রাখেন ও দিন শেষে ইফতার করেন; কিন্তু ধর্ম এক হলেও দেশে দেশে সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে তাদের সবার ইফতার আয়োজন এক না। বরং, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের ইফতার আয়োজনে রয়েছে বৈচিত্র্য।
যদিও প্রায় সব দেশেই সাধারণত খেজুর বা পানির মতো হালকা কিছু দিয়ে ইফতার শুরু হতে দেখা যায়, কিন্তু দেশে দেশে ইফতার আয়োজনে বাহারি পদের খাবার দেখা যায়।
পাকিস্তান
সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করেন পাকিস্তানে। ডব্লিউপিআরের তথ্য বলছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ ভাগেরও বেশি, অর্থাৎ ২৪ কোটি মানুষ মুসলিম।
পাকিস্তানে ইফতার আয়োজনে পানি এবং খেজুর তো থাকেই তবে সেখানে প্রাধান্য পেতে দেখা যায় মাংস ও রুটির মতো সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো। নানা ধরনের কাবাব, তান্দুরি, কাটলেট, টিক্কার উপস্থিতি প্রায় প্রতিদিনের ইফতারেই রেখে থাকেন বড় অংশের পাকিস্তানি। এসব ভারি খাবারের পাশাপাশি ইফতারের সময় বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবারও খেয়ে থাকেন তারা। যেমন- রোল, নিমকি, মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি করা এক ধরনের বিশেষ সমুচা, বিভিন্ন ধরনের চপ, পাকোড়া ইত্যাদি।
এছাড়া নানারকম শরবত, ফল বা ফলের সালাদ, ছোলা-বুট, ফালুদা, জিলাপি, এমনকি বিরিয়ানি দিয়েও তাদের ইফতারের টেবিল সাজানো হয়। তবে পানীয় হিসেবে রুহ আফজার কদর এ দেশে সবচেয়ে বেশি।
ইন্দোনেশিয়া
ডব্লিউপিআরের তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ, অর্থাৎ দেশটির প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি মানুষ মুসলিম।
ইন্দোনেশিয়ানরা ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম ফল এবং ফলের শরবতকে প্রাধান্য দেন। এছাড়া তাদের ইফতার আয়োজনে নানা রকম মিষ্টি জাতীয় খাবারও থাকে।
ইন্দোনেশিয়ার সংবাদপত্র দ্য জাকার্তা পোস্ট-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুবুর চ্যান্ডিল নামক এক ধরনের মিষ্টান্ন, মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি বিজি সালাক, কলা, মিষ্টি আলু অথবা কুমড়া দিয়ে তৈরি কোলাক, কলা দিয়ে তৈরি এস পিসাং ইজোসহ আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার এ সময় ইন্দোনেশিয়ানরা তৈরি করে থাকে।
ভারত
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ ২০ কোটি মানুষ হলো মুসলিম। তবে সংখ্যায় হিসাব করলে এটি মোটেও কম নয়।
বিশাল আয়তনের এ দেশটির একেক রাজ্যের ইফতার আয়োজনে একেক খাবার জনপ্রিয়।
যেমন- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বলছে, ভারতের হায়দ্রাবাদের মুসলিমরা ইফতারে হালিম খেতে পছন্দ করেন। আবার কেরালা ও তামিলনাড়ুর মুসলমানরা ইফতার করেন ‘নমবু কাঞ্জি’ নামে এক ধরনের খাবার দিয়ে। নমবু কাঞ্জি হলো মাংস, সবজি এবং পরিজের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
তবে সামগ্রিকভাবে দেখলে ভারতেও ইফতারে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়ার চল আছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অলিতে-গলিতে ইফতারের আগে আগে নানা ধরনের পাকোড়া, সমুচা, চপ ইত্যাদি বিক্রির ধুম পড়ে যায়। তবে দিল্লিসহ দেশটির উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ইফতারের শুরুতে পানির সাথে থাকে খেজুর, ছোলা-বুট, হরেক রকম ফল ও ফলের শরবত, দুধ, ডিম, দইয়ের মতো খাবার। ভারি খাবারের মাঝে থাকে বিভিন্ন ধরনের কাবাব, হালিম, কাটলেট, শর্মা, স্যুপ, বিরিয়ানি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ ১৫ কোটির বেশি মানুষ মুসলিম।
উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও ইফতারে অনেক ভাজা-পোড়া খাবার খেতে দেখা যায়। এর মধ্যে থাকে- পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, বিভিন্ন ধরনের সবজির পাকোড়া ইত্যাদি। এছাড়া তাদের ইফতার আয়োজনে আরও থাকে মুড়ি, ছোলা বুট, জিলাপি, হালিমসহ নানা রকমের শরবত ও ফল।
এসব হালকা খাবারের পাশাপাশি অনেক পরিবার ইফতারের সময় হাতে তৈরি নানা রকমের পিঠা-পুলি, তেহারি, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, তন্দুরি চিকেনের মতো ভারি খাবারও খান।
তবে ফলের মধ্যে খেজুর প্রায় অপরিহার্যই বলা যেতে পারে। এটি ছাড়া বাংলাদেশি মুসলিমদের ইফতার টেবিল একরকম অসম্পূর্ণই বলা যায়। মসজিদগুলোতে যে ইফতার আয়োজন করা হয়, সেখানেও খেজুরের উপস্থিতি থাকে। ইসলামের নবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইফতারের শুরুতে খেজুর খেতেন বলে বিশ্বব্যাপী এটি এত জনপ্রিয়।
নাইজেরিয়া
ডব্লিউপিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ মুসলিম জনগোষ্ঠী বসবাসের দিক থেকে শীর্ষ দশের মাঝে আছে পশ্চিম আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়াও। যদিও দেশটিতে মুসলিম আছে নয় কোটি ৭০ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪২ শতাংশ।
নাইজেরিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ইফতারে শর্করা জাতীয় খাবার ও ফলমূলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন- জল্লফ রাইস, এটি নাইজেরিয়ানদের অন্যতম প্রধান খাবার। চাল, পিঁয়াজ, টমেটো, মরিচ ইত্যাদির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়। এটি তারা সবজি বা মাংসের সঙ্গে খান।
পাশাপাশি মই মই (পুডিং), ইয়াম (এক ধরনের আলু), আকারা (বিন কেক), মাসা (রাইস কেক), ইলুবো ও আমালার (ইয়াম দিয়ে তৈরি এক বিশেষ খাবার) মতো আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারও তাদের ইফতার তালিকায় থাকে।
মিসর
রহস্যঘেরা পিরামিড আর নীল নদের দেশ মিসরে নয় কোটি মানুষ মুসলিম। দেশের মোট জনসংখ্যার হিসেবে মুসলিমরা প্রায় ৭৯ শতাংশ। দেশটিতে ইফতার মানেই একধরনের আনন্দ-উৎসব।
মিসরের মুসলিমরা ইফতারের সময় মৃদু আলো দেয় এমন রঙ্গিন লণ্ঠন জ্বালিয়ে থাকেন। শুধু তাদের বাড়িতে নয়, পুরো রমজানজুড়ে সেখানকার পথেঘাটেও বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন আলো জ্বলতে দেখা যায়। রমজানে তাদের ইফতার টেবিলে থাকে নানা ধরনের খাবারের সমারোহ। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আতায়েফ’ ও ‘কুনাফা’। আতায়েফ হলো এক ধরনের প্যানকেক ও কুনাফা এক ধরনের সিরাপ।
এই দুটো খাবার মিশরীয় মুসলমানদের ইফতারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা যেতে পারে। তবে দেশটির অনেক পরিবার ইফতারে বাদামি রুটি এবং মটরশুঁটি, টমেটো, বাদাম ও অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি ‘ফুল মেদেমাস’ নামক এক ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন।
মিডল ইস্ট আইর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিসরীয়রা তাদের ইফতারে এপ্রিকটস ফল দিয়ে তৈরি কামার-আল-দিনান্দ আরায়সি এবং দুধ, ভ্যানিলা ও নারিকেল দিয়ে তৈরি সোবিয়া নামক পানীয় পান করেন। এছাড়া তাদের খাবার টেবিলে বিভিন্ন ধরনের ফল, ফলের রস, সবজি ইত্যাদিও থাকে।
তুরস্ক
তুরস্কের ৯৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আট কোটি মানুষ মুসলিম। দেশটির বিভিন্ন খাবার এখন শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এগুলো ‘টার্কিশ ফুড’ নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মতো ইফতারের তাদেরও পছন্দের শীর্ষে থাকে খেজুর। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ফলমূল, শরবত, হরেক রকম কাবাব তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে।
তবে রমজানে দেশটির মুসলমানদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হলো রামাজান পিদেসি, যা এক ধরনের রুটি। এটি নান রুটির মতো একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। প্রথমে ময়দার সাথে দুধ, মাখন, জলপাই দিয়ে খামির তৈরি করা হয়। পরে রুটির ভেতর ডিম ও গরুর মাংসের পুর দিয়ে সেটিকে চুলায় বেক করা হয়।
ইরান
ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, যার ৯২ শতাংশ মানুষ (আট কোটি ২৫ লাখ) মুসলিম। রুটি, স্যুপ, র্যাপ, কাবাবের মতো সুপরিচিত খাবারের পাশাপাশি ইফতারে ইরানের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জাফরানের ঘ্রাণযুক্ত এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী পার্শিয়ান হালুয়া। এছাড়া জাফরান চাল দিয়ে তৈরি ‘শোলেহ জার্দ’ নামক এক ধরনের পুডিংও ইরানিদের খুব প্রিয়।
পার্শিয়ান নুডুলস, সবজি, পেঁয়াজ, বিন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি আশ রাসতেহ নামক ঘন স্যুপ ও হালিমও সেখানে ইফতারের সময় আগ্রহ নিয়ে খাওয়া হয়।
সেই সঙ্গে তাদের ইফতারে আরও থাকে স্যান্ডউইচ, চা, তাবরেজি চিজ, জুলবিয়া বাংলায় যাকে জিলাপি বলা হয়, বামিয়েহ নামক এক ধরনের মিষ্টান্ন ইত্যাদি। ইরানের অন্যতম প্রধান খাবার হলো খেজুর। তাই ইফতার টেবিলে এর উপস্থিতি অপরিহার্য।
আলজেরিয়া
উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ মুসলিম। ডব্লিউপিআরের হিসেবে, দেশটিতে মাত্র সাড়ে চার কোটি মুসলিম বসবাস করে। জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ মুসলিম দেশগুলোর মাঝে এর অবস্থান দশম।
আলজেরিয়ান মুসলিমরা পিজ্জা ‘সোয়ারবা’, সবজি রোল, আলু, সবজি দিয়ে তৈরি দোলমা ইত্যাদি দিয়ে তাদের ইফতার শুরু করেন। মাগরিবের নামাজের পর তারা ‘সিগার’ নামক এক ধরনের পানীয় পান করেন, যা বাদাম দিয়ে তৈরি। এছাড়া তাদের ইফতারের তালিকায় বিভিন্ন স্যুপও থাকে। হারিরা স্যুপ, যা নর্থ আফ্রিকান দেশগুলোতে খুব জনপ্রিয়।
সৌদি আরব
মুসলিম দেশগুলো নিয়ে আলোচনা করলে সৌদি আরবের কথা না বললেই নয়। যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে শীর্ষ দশে নেই দেশটি। ডব্লিউপিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে মোট সোয়া তিন কোটি মুসলিম বসবাস করেন, যা দেশটির মোট জনংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদন বলছে, সৌদিরা ইফতারের শুরুতে ‘গাহওয়া’ নামক অ্যারাবিক কফি পান করেন এবং সেইসঙ্গে অবশ্যই খেজুর খান। এরপর তারা মাগরিবের নামাজ পড়েন।
নামাজ শেষে তারা ভারি খাবার খান। সৌদি আরবেও অঞ্চলভেদে ইফতারের খাবারে ভিন্নতা রয়েছে। দেশটির পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ তাদের ইফতারে শৌরাইক রুটি ও দুজ্ঞাহ নামে ঐতিহ্যবাহী খবার খান। আবার পূর্বাঞ্চলের লোকেরা ইফতারে সালুনা নামের একটি খাবার খান, যা মাংস ও সবজির স্টু দিয়ে তৈরি।
দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মানুষ তাদের রোজা ভাঙ্গেন আসিদাহ, মারগগ, মাফরৌক ও মাতাজিজ নামক ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে। এগুলো বাদামি আটা, গরুর মাংস, সবজি, মধু, পেঁয়াজ বা ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। দেশটির আরেকটি জনপ্রিয় খাবার থারিদ, যা মূলত ভেড়ার মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ জাতীয় খাবার।
ইফতারকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি
বিশ্বজুড়ে ইফতারের আয়োজন মানেই মুসলিমদের কাছে যেন উৎসব। যারা রোজা পালন করেন না তাদের অনেকেই ইফতারের আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যেমন- শিশুদের জন্য রোজা রাখার বিধান না থাকলেও অনেক পরিবারেই দেখা যায় যে, বড়দের পাশাপাশি তরুণরা, এমনকি শিশুরাও ইফতারের খাবার প্রস্তুত করতে এগিয়ে আসে।
তবে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার পাশাপাশি অনেক মুসলিম মসজিদে গিয়ে সবার সঙ্গে মিলেমিশে ইফতার করেন। এতে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত হয়।
ইফতারের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর একে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ইফতারকে বিশ্বের ‘অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি দিতে তুরস্ক, ইরান, উজবেকিস্তান ও আজারবাইজান ইউনেস্কোর কাছে যৌথভাবে আবেদন করেছিল।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।