ড. ইউনূসের ৩ চ্যালেঞ্জ : দ্য ইকনোমিস্ট – দৈনিক গণঅধিকার

ড. ইউনূসের ৩ চ্যালেঞ্জ : দ্য ইকনোমিস্ট

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৮ আগস্ট, ২০২৪ | ২:১৪
গত ৫ই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঢাকায় বিচার হওয়ার কথা ছিল। একটি দুর্নীতি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। তবে মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে নোবেল বিজয়ী, অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক উদ্যোক্তা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন। তবে অস্থিতিশীল এই সময়ে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে তাকে। ড. ইউনূস যে প্রধান ৩টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকনোমিস্ট। কয়েক সপ্তাহের ছাত্র আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ত্যাগ শেখ হাসিনা। আন্দোলন চলাকালীন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহিংস দমন-পীড়ন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে সরাতে পারেনি। ঢাকার রাস্তায় সশস্ত্র সেনা এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা এখন নিজ দায়িত্বে সড়তে ট্রাফিক পরিচালনা করছে এবং সংসদসহ লুটপাট করা ভবনগুলো পরিষ্কার করেছে। এক রাতের ব্যবধানে বছরের পর বছর ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসন এখন পুনরায় গণতন্ত্রে রূপ নেবে আশা দেশবাসীর। সেই আশা কি পূরণ হবে? বাংলাদেশে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করাটা অনেকাংশেই কঠিন হবে। এর একটি কারণ হতে পারে, শেখ হাসিনার আকস্মিক পলায়নের ফলে দেশে নেতৃত্বের যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটি পূরণ করা। এই শূন্যতা কে পূরণ করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার আওয়ামী লীগ দল এখন কুখ্যাত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হাসিনার পদত্যাগের পরপরই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেত্রী খালেদা জিয়া। তবে ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রী বর্তমানে অসুস্থ এবং শেখ হাসিনার আমলে তার দল বিএনপি একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বিএনপি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ববাদী শাসন বাংলাদেশে নতুন এবং আরও উদারপন্থি শক্তির উত্থানকে বাধা দিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামপন্থি দলগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারাও এখন নেতৃত্বের এই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইতে পারে। তবে এই চ্যালেঞ্জটি আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, বাংলাদেশ এখন চীন, ভারত এবং পশ্চিমাদের মধ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে আশা জাগানিয়া কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সংযম দেখিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ওইদিনই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের দিন ড. ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের দাবির কাছে মাথা নত করেন তিনি। প্রথম চ্যালেঞ্জ: দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ৮ আগস্ট প্রত্যাশিতভাবে শপথ নেওয়ার পর ড. ইউনূসের প্রথম কাজ হবে দেশে আবার শান্তিপূর্ণ রাজনীতি নিশ্চিত করা। দেশের সরকারি চাকরিতে কোটার সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে ছাত্ররা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের সব ধরনের সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটার বিরোধিতা করেছিলেন। প্রতিবাদকারীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এই সিস্টেম মূলত আওয়ামী লীগের সদস্যদেরই উপকারে এসেছে। বিক্ষোভকারীদের দমনের চেষ্টায় সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছিল সরকার। এই আন্দোলনে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনের তোপের মুখে অবশেষে কোটা বাতিলে ঘোষণা দেয় আদালত। তবে তখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যেই কোটা সংস্কারের আন্দোলন বছরের পর বছর ধরে চলা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনে অতিষ্ট জনগণের হতাশাকে উস্কে দিয়েছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তার বাসভবনে ভাংচুর এবং পুলিশ স্টেশন ও আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলার ঘটনাগুলো প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভেরই প্রতিফলন। অব্যাহত এই অশান্তির ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ৭ আগস্ট দেশবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। দেশবাসীর ‍উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার শান্ত থাকুন এবং আপনার চারপাশের মানুষদের শান্ত থাকতে সহযোগিতা করুন।’ দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ: ড. ইউনূসের পরবর্তী কাজ হবে বাংলাদেশের রাজনীতির পুনর্গঠন করা। আর এর জন্য শুধু দ্রুত নতুন নির্বাচনের আয়োজনই যথেষ্ট নয়। তাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। দেশের আদালত ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব কমাতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলো অস্থিরতার উৎস হিসেবে কাজ করছে। একইসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার জন্য সময় ও সুযোগ দিতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো ছাড়া একটি নতুন নির্বাচন সহজেই ইসলামপন্থি গোষ্ঠী বা একটি পুনর্গঠিত বিএনপির পক্ষে যেতে পারে। তবে এই শক্তিগুলোও দলকেন্দ্রিতায় ভুগছে। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ: ড. ইউনূসের জন্য তৃতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হল একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ ভারত সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সবচেয়ে বড় উৎস। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশটির একটি ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগকে এই অঞ্চলে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে দেখে ভারত। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে সতর্ক হয়ে ভারত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, জ্বালানি ও সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত করেছে। নির্বাসনে যাওয়া ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্বেষী বাংলাদেশী জনসাধারণের মুখোমুখি হয়েছে ভারত। এই জনতার অনেকেই তাকে আর সমর্থন করেন না। এছাড়া, নিজ দেশে ভারত বাংলাদেশে অবস্থান করা আনুমানিক ১০ হাজার ভারতীয় নাগরিক এবং সেইসঙ্গে সেখান বসবাসকারী ১ কোটি ৪০ লাখ হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং যেকোনও উত্তরসূরি শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে। এমন না যে তিনি চীনের প্রতি বিরূপ ছিলেন। তার শাসনামলে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী, তৃতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা এবং সামরিক প্রযুক্তির প্রধান উৎস হয়ে ওঠে। তবুও, চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য ভারত ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন শেখ হাসিনা।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আটিগ্রাম মাঠে ঈদের সন্ধ্যায় মানুষের ভিড়, পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসনীয় মিরপুরে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হক আর নেই এডভোকেট নুরুল ইসলাম দুলাল আর পৃথিবীতে নেই শেরপুরে ৭ গ্রামে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে সন্ত্রাসী লিপটন ও তার তিন সহযোগী আটক ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শাহিন রামু সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক কুষ্টিয়া বাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাজল মাজমাদার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি রেড ক্রসে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই মিরপুরে জামায়াত ইসলামী থেকে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা মিরপুরে পুলিশের অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত দুই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার বাবার সঙ্গে গরু বিক্রি করতে এসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ফয়সালের এবার ঢাকাবাসীকে নিয়ে নিজেই শপথ পড়ার ঘোষণা ইশরাকের ফারুকের মনোনয়ন বাতিল ও আমিনুলের মনোনয়ন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট নিখোঁজ সংবাদ জাপানের সহযোগিতায় কুষ্টিয়াসহ চার জেলার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু মেহেরপুর মুজিবনগরে ১১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ জন আটক