হাতে টুপি বানিয়ে মোর্শেদা এখন লাখপতি! – দৈনিক গণঅধিকার

হাতে টুপি বানিয়ে মোর্শেদা এখন লাখপতি!

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ মার্চ, ২০২৪ | ৯:১৭
কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতে তৈরি টুপি মধ্যপ্রাচ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বাহারি রঙের সুতা আর রেশমের উপরে আঁকা বিভিন্ন ডিজাইনে বানানো টুপির চাহিদা বেড়েই চলছে। এই টুপি তৈরি করে এখানকার হাজারও নারীর হয়েছে কর্মসংস্থান, সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। তবে এমন আয় আর সুনামের গল্পের পেছনে মূল নারী উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগমকে পাড়ি দিতে হয়েছিল অনেকটা পথ। বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় নারীদের আইকন হিসেবে পরিচিত তিনি। হাতে টুপি বানানো শুরু করে প্রথমে পান ৩৫০ টাকা। সেই মোর্শেদা এখন লাখপতি। মোর্শেদা বেগম কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পাতিলাপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিপুণ হস্তশিল্প সম্ভার নামে টুপি তৈরির প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তিনি। জানা গেছে, মোর্শেদা বেগম যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী, তখন তার বিয়ে হয়। সংসারে অভাব থাকায় ১৯৯৫ সালে বিয়ের পর স্বামী জাবেদ আলীর সঙ্গে চলে যান টাঙ্গাইলে। সেখানে একটি টাওয়াল ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। ভাড়া বাসার পাশে পরিচয় হয় মোছা. কমলা বেগমের সঙ্গে। কমলা বেগমের টুপি তৈরির কাজ দেখে দেখে রপ্ত করেন কলা-কৌশল। দিনে ফ্যাক্টরির কাজ আর রাতে টুপি বানানো শুরু করেন মোর্শেদা। প্রথম টুপি তৈরি করে মজুরি পান ৩৫০ টাকা। পরে তার নিখুঁত কাজ দেখে মুগ্ধ হন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। প্রথম অর্ডারে ৫০টি টুপি তৈরি করে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার টাকা। এরপর মোর্শেদা বেগম গ্রামে ফিরে আসেন। প্রথমে এলাকার ৭ জন নারীকে নিয়ে শুরু করেন দারিদ্র্য জয়ের সংগ্রাম। হাতে বানানো টুপি তৈরি করে এখন তিনি লাখপতি। তার সফলতার গল্প শুনে দলে দলে অন্যান্য নারীরা টুপি বানানো কাজে ছুটে আসেন। বর্তমানে তার সঙ্গে ৫ হাজার নারী কাজ করছেন। মোর্শেদা বেগম শুধু নিজ গ্রাম পাতিলাপুরের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন নাই, আশপাশে প্রায় ৪০-৫০টি গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বয়সি নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও এ কাজ করে সংসারের আয় জোগাচ্ছেন। মোর্শেদা জানান, ফেনীর দুজন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি তৈরি করা টুপি বিক্রি করেন। আর এই টুপি মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, সৌদি আরব, দুবাইয়ে বিক্রি হয়। ওই ব্যবসায়ীরা তার কাছে রেশম সরবরাহ করেন। এরপর তিনি নারীদের সঙ্গে নিয়ে স্রেফ সুঁই সুতা দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের নকশাখচিত টুপি। টুপি তৈরির দেখভাল করতে বিভিন্ন গ্রামে বেতনভুক্ত প্রায় ১৫ জন সুপারভাইজার রেখেছেন। তিনি জানান, হাতে বানানো প্রতিটি টুপি তৈরির জন্য নারীরা পারিশ্রমিক পান ৮০০-১৬০০ টাকা। এতে সুই সুতার খরচ ১৪০-১৫০ টাকা। প্রতি টুপিতে তিনি কমিশন পান ৭০-৯০ টাকা। প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টুপি বিক্রি করেন তিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিপুণ হস্ত সম্ভারের টুপি তৈরির পরিধি আরও বাড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি। পাতিলাপুর গ্রামের হাওয়া বেগম জানান, চার বছর আগে মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন তার আর অভাব নেই। সংসারের স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে ভালো আয় করছেন তিনি। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. মুক্তা খাতুন বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি মোর্শেদা আন্টির টুপি তৈরির কাজ করি। এখান থেকে যা উপার্জন করি লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করতে পারি। শুধু আমি না, আমার মতো বিভিন্ন বয়সের নারীরা এখানে কাজ করে ভালো টাকা পাচ্ছেন। সাত দরগাহ গ্রামের মৌসুমি বলেন, সারা বছর আমরা টুপি তৈরির কাজ করি। বিশেষ করে রমজান মাস ও কুরবানি ঈদে সময় টুপির চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় টুপি বানিয়ে জনপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা পাই। কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে খুব সুন্দর ঈদ কাটাতে পারছি। কুড়িগ্রাম বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, পাতিলাপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগমের টুপি মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছে। এটি কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ভালো খবর। হাজার হাজার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি। সরকারি কোনো প্রশিক্ষণ, আর্থিক ঋণ অথবা তৈরি টুপির বাজারজাতকরণে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে কুড়িগ্রাম বিসিক শিল্প মোর্শেদা বেগমকে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আটিগ্রাম মাঠে ঈদের সন্ধ্যায় মানুষের ভিড়, পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশংসনীয় মিরপুরে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হক আর নেই এডভোকেট নুরুল ইসলাম দুলাল আর পৃথিবীতে নেই শেরপুরে ৭ গ্রামে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে সন্ত্রাসী লিপটন ও তার তিন সহযোগী আটক ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ দক্ষিণ চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শাহিন রামু সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক কুষ্টিয়া বাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কাজল মাজমাদার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি রেড ক্রসে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই মিরপুরে জামায়াত ইসলামী থেকে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা মিরপুরে পুলিশের অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত দুই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার বাবার সঙ্গে গরু বিক্রি করতে এসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ফয়সালের এবার ঢাকাবাসীকে নিয়ে নিজেই শপথ পড়ার ঘোষণা ইশরাকের ফারুকের মনোনয়ন বাতিল ও আমিনুলের মনোনয়ন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট নিখোঁজ সংবাদ জাপানের সহযোগিতায় কুষ্টিয়াসহ চার জেলার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু মেহেরপুর মুজিবনগরে ১১০০ পিস ইয়াবাসহ ১ জন আটক