নিউজ ডেক্স
আরও খবর
চাটমোহরে ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ, কাটা হয়েছে পায়ের রগ
দেশ গঠনের বার্তা দেবেন তারেক রহমান
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে: মুজিবুর রহমান
খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশে নেওয়া হবে : মির্জা ফখরুল
বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের ২ কর্মী নিহত
আমার ছেলে যেন এমনই সাধারণ থাকে: আসিফের বাবা
আ.লীগে নাকি ১৪ দলে সিদ্ধান্ত বৈঠকের পর
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম বলেছেন, ছেড়ে আসা দল আওয়ামী লীগে ফিরে যাবেন নাকি দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে শরিক হবেন-সে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর।
শিগগিরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি দাবি করেন। সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সময়ের কাজ অসময়ে করি না। একইভাবে সময়ের কথা অসময়েও বলি না। সময় আসুক, কথা বলব। অযথা কথা বলে বাহবা নেওয়ার অভ্যাস আমার নেই।’
সম্প্রতি দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাবর রোডের বাসায় দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ, পরবর্তী রাজনৈতিক পরিকল্পনাসহ নানা ইস্যুতে খোলামেলা মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার দলের রাজনীতি মূলত বঙ্গবন্ধুকে নির্ভর করে। আলাদা দল করলেও আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিই করি। বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। রাজনীতিতে এসেছি বঙ্গবন্ধুকে দেখে। তার স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি। দেশপ্রেম কাকে বলে তাও বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিখেছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন। যৌবনে মানুষ প্রেম করে, প্রেমের চিঠি লেখে। আমার প্রেম ছিল বঙ্গবন্ধু। তার ডাকে অস্ত্র হাতে নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আবার তার আহ্বানেই সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে অস্ত্র জমা দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। বঙ্গবন্ধুই আমার ধ্যানজ্ঞান। বঙ্গবন্ধু যেভাবে চেয়েছেন, যা চেয়েছেন-বর্তমান বাস্তবতায় সেভাবে হয়তো অনেক কিছু করতে পারব না। করাও যাবে না। তবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিই করব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছি। আবার অনেকে হয়তো মনে করছেন, আমি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিচ্ছি। তবে আমি কি করব, তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর ঠিক করব। শিগগিরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কয়েক দফা টেলিফোনেও কথা হয়েছে। তিনি আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। আমিও তার খোঁজখবর নিয়েছি।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জীবনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করে দেশের ভেতরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মোকাবিলা করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। মুক্তিযুদ্ধে তার এই অসীম সাহসিকতার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বীর-উত্তম খেতাব দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিমর্মভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম এর প্রতিবাদে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গ্রেফতার এড়াতে আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে (প্রথমে শিলিগুড়ি, পরে বর্ধমান)। দীর্ঘদিনের নির্বাসন শেষে ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। তবে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে জয়ী হন।
তবে কিছুদিন না যেতেই সরকার ও দলের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। একপর্যায়ে দল এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকেই আবার উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ওই সময় তিনি দাবি করেন, তাকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষোভ ও বিক্ষোভ থেকে ১৯৯৯ সালে ২৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হন। পরে এই জোটে যুক্ত হয়ে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি চালকের আসন নেয়। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে ভোট যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার বড় মেয়ে ব্যারিস্টার কুড়ি সিদ্দিকী। ঋণখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে বাবার পরিবর্তে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন মেয়ে ব্যারিস্টার কুড়ি সিদ্দিকী। তবে জয়ী হতে পারেননি তিনি।
নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রথম যে দলটি বেরিয়ে যায়, তার নাম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এরপর থেকেই একাকী পথ চলছেন তিনি। সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবারে দেখা করে আসার পর নতুন করে উঠে আসেন আলোচনায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এরপর টাঙ্গাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র সমর্পণের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সরকারের এক মন্ত্রী ও একাধিক শীর্ষ নেতার উপস্থিতি তাকে নিয়ে আলোচনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার অনেক দূরত্ব আছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমার ভিন্নমত রয়েছে। যদি বেগম মতিয়া চৌধুরী. শাজাহান খান, হাসানুল হক ইনুর মতো লোকদের আওয়ামী লীগ গ্রহণ না করত তাহলে হয়তো অনেকটাই দূরত্ব কম থাকত। আজকের মতিয়া চৌধুরীকে দেখে এই প্রজন্মের খারাপ নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমার খারাপ লাগে। কারণ আমি তখন ইতিহাসেন সাক্ষী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেগম মতিয়া চৌধুরী কিভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতেন, ভেংচি কেটে কথা বলতেন-তা আমি নিজ কানে বহুবার শুনেছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, হাসানুল হক ইনুকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন, আপনি কেন পারবেন না-এমন প্রশ্নের জবাবে রণাঙ্গনের এই বীর যোদ্ধা বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) পারেন। রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা হলে কখনও কখনও অনেক কিছু ইচ্ছার বিরুদ্ধেও গ্রহণ করতে হয়। মনঃকষ্ট সইতে হয়। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক কিছু গ্রহণ করেছেন। অনেক কিছু সহ্য করে নিয়েছেন। আসলে রাজনীতি সব সময় সরল রেখায় চলে না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলেও কিছু নেই। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেককিছু মেনে নিতে হয়। করতে হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই কাজটিই করছেন। দল ও জোটের প্রধান হলে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, পাশের দেশ ভারতেই জোটের রাজনীতি চলছে। সেখানেও দেখবেন জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। সরকার গঠন করছে। আবার জোটের শরিক দলের সমালোচনাও করছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি দীর্ঘদিন ভারতে ছিলাম। তাই ভারতের রাজনীতি কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। সন্তানের মতোন ভালোবাসতেন তিনি আমাকে। বামফ্রন্টের সরকারও দেখেছি। তাদের টানাপোড়েন দেখেছি। জ্যোতি বসু আমাকে খুবই স্নেহ ও আদর করতেন। ভালোবাসতেন। সেখানে দেখেছি, জোটে থেকেও সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। আসলে জোটগতভাবে নির্বাচন ও সরকার গঠন করতে হলে সমালোচনাও সহ্য করতে হয়। আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও এসব সহ্য করেই রাজনীতি করছেন।
গত নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিলেন, আগামী নির্বাচনের আগে কি করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কখনও আওয়ামী লীগের বিরোধী জোটে ছিলাম না। বিএনপির সঙ্গেও জোটে ছিলাম না। গত নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি ড. কামাল হোসেনকে দেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেই। এটা বিএনপির জোট ছিল না। তাদের জোট ছিল আলাদা, যেটা ২০ দলীয় জোট নামে পরিচিত। কিন্তু পরে বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে এক পাশে রেখে আরেকদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে চালকের আসনে বসে। আমি সবার শেষে এই জোটে যাই, আবার সবার আগে বেরিয়ে আসি।
তাহলে নিজের দলের প্রতীক গামছা বাদ দিয়ে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে ওই নির্বাচনে অংশ নিলেন কেন-জানতে চাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, এটা জোটের সিদ্ধান্ত ছিল। তাই আমরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেই। জোটে থাকলে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকেও গণফোরামের একজন প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়ী হন। আপনারাও তা করতে পারতেন-এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বলেন, জোটের সিদ্ধান্ত ছিল সবাই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু গণফোরামের একজন এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। তাদের দলের বাকিরা কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেন। আমি যেহেতু তখন ওই জোটে ছিলাম, তাই জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াটাই সমীচীন মনে করেছি।
দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবারে গণভবনে দেখা করলেন, কি কথা হলো আপনাদের-এমন প্রশ্নে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাকে স্নেহ করেন। আদর করেন। তিনি আমাকে তার পরিবারের একজন সদস্য বলে মনে করেন। আমিও তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। তাই দেখা হলে তার পায়ে হাত রেখে সালাম করি। আমি সবসময় তার সফলতা কামনা করি। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, এবার অনেকদিন পর আমি সপরিবারে তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাই বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে এটা এমন না যে আমাদের নতুন দেখা-সাক্ষাৎ। আমাদের মাঝে মধ্যেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়, হয়েছেও। কথা হয়, হচ্ছেও। তবে এটা ঠিক এবারে সাক্ষাৎ নানা কারণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা দুজনই দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। রাজনৈতিক দলের নেতারা একসঙ্গে বসলে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে-এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের মধ্যে রাজনীতি নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এই আলাপ-আলোচনা আগামীতেও হবে।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবারের দেখা-সাক্ষাতের পর আমি প্রচণ্ড চাপে আছি। এত চাপ আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে পাইনি। আমার এলাকার মানুষ, আমাকে যারা ভালোবাসেন, পছন্দ করেন-তারা আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছেন। এই চাপ হয়তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা। এ কারণে ইদানীং লক্ষ্য করছি, সখীপুর-বাসাইলসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রচুর মানুষ সমবেত হচ্ছেন। তারা আমার কথা শুনতে চান। আমার রাজনৈতিক পদক্ষেপ কি হয়, তা দেখতে চান। মনে হচ্ছে, তারা আমার কাছে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাজনীতি দেখতে চাচ্ছেন। আমিও বাকি জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে যেতে চাই। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বা ক্ষমতাহীনদের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য রাজনীতির করার কথা বলছি না। আমি রাজনীতি করছি, করতে চাই জনগণের জন্যই।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার রাজনীতি মানুষের জন্য। আমি চাই মানুষের জন্য কিছু করতে। মানুষের জীবন, সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এই রাজনীতি আমি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিখেছি। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। জীবন দিয়েছেন। আমিও সেই রাজনীতি মনেপ্রাণে ধারণ করে পথ চলছি। যদিও এখনকার রাজনীতি অনেকটাই বদলে গেছে। আজ থেকে ৫০ বা ৫২ বছর আগে যে রাজনীতি ছিল তা এখন নেই। আমি পাকিস্তান আমলেও ১০-১২ বছর রাজনীতি করেছি। তখন রাজনীতি ছিল রাজনীতিকিদের হাতে। মিছিল-মিটিংয়ে কোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিকে দেখিনি। বিত্তশালীদেরও দেখিনি। হয়তো তারা ছিল, কিন্তু পেছনের সারিতে থেকে জনগণের সঙ্গে মিশে থাকত। আর এখনকার রাজনীতির চিত্র পুরোটাই উলটো। এখন রাজনীতির পুরোটাই ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও বিত্তশালীদের হাতে চলে গেছে। তারা কখনও সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। ভাবতেও পারে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও এক সময় আপনি বৈঠক করেছেন-কি কারণে সেই বৈঠক ছিল-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক খালেদা জিয়া এখন যে বাসায় আছেন, সেখানে একবার আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গেছি। প্রায় দুই ঘণ্টা তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আমি তাদের বলেছি, বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে আমার রাজনীতি করা সম্ভব না। একটা কথা পরিষ্কার-আমি ভুল করতে পারি। কিন্তু সচেতনভাবে অন্যায় করি না। অন্যায় থেকে দূরে থাকি। মনে রাখতে হবে, দল ও সমাজ আলাদা। অনেকেরই খুব গর্ব থাকে। গর্ব করে। এটা ভালো। কিন্তু পরিমাণের চাইতে বেশি গর্ব করা খুব খারাপ। আমার কাছে আমার দেশ অনেক বেশি প্রিয়। দেশের স্বার্থেই তখন আমি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। একইভাবে আজকেও মনে করি, দেশের স্বার্থেই এই মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। দ্বিধাবিভক্ত মানুষের সমাজে কোনো মূল্য নেই। ঐক্যবদ্ধ জনগণ পৃথিবীর সবচাইতে বেশি শক্তিশালী। যা ১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।