ভবঘুরেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় – দৈনিক গণঅধিকার

ভবঘুরেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২:৩৫
কিছু দিন আগেও রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে প্রতিদিনই হাজির হতেন সারা দেশের প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতারা। দলটির সব ধরনের কর্মসূচিও পরিচালনা হতো এখান থেকেই। নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকতো ভবনটি। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পটপরিবর্তনের পর বদলে গেছে সেই চিত্র। চকচকে সেই ভবনে এখন কেবলই ধ্বংসাবশেষ। নিচতলা এখন পথচারী এবং ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের শৌচাগারে পরিণত হয়েছে। আর উপরের দরজা-জানালাবিহীন কক্ষগুলোতে অবাধে যাতায়াত শুরু করেছেন ভবঘুরে ও মাদকসেবীরা। রাত হলে এখানে চলে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডও। ১০ তলাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে থেকেই ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ চোখে পড়ে। সুসজ্জিত ভবনের সব মালামাল লুট হয়ে গেছে। পোড়া দেয়াল ছাড়া কোনও কিছুই অবশিষ্ট নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনটির পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এই এলাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করি। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের এই অফিস কীভাবে আগুন লাগিয়ে ভাঙচুর করে ধ্বংস করা হয়েছে, তা নিজের চোখে দেখেছি। সেদিন অন্তত ২০০-২৫০ জন লোক এসে পুরো ভবন তছনছ করে গেছে। ভবনের যাবতীয় সব আসবাব নিয়ে গেছে।’ এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘তিন ধাপে এই ভবন ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হয়েছে। এখনও ভবনের বিভিন্ন অংশের রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। যে যেভাবে পারছে পড়ে থাকা ইট-বালু পর্যন্ত নিয়ে গেছে। দামি মালামাল নেওয়া শেষে ৫ আগস্ট একবার আগুন লাগানো হয়েছে। পরে ৬-৭ তারিখে আবার আগুন দেওয়া হয়।’ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বসা ফুটপাতের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেমন কর্ম করেছে, তেমন ফল ভোগ করছে। এই ভবনে বসে তারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতনের নকশা আঁকতো। এটা ছিল তাদের রাজপ্রাসাদ। আজ সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এখান থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত যে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলা এখন গুলিস্তানের ফুটপাতের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথচারীদের পাবলিক টয়লেটে রূপ নিয়েছে। কার্যালয়ের সামনে দাঁড়াতেই দেখা যাবে, একটু পরপর আশপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা সেখানে প্রস্রাব করতে যাচ্ছেন। এমন একজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘চেপে ধরে রাখতে পারিনি। তাই তাড়াহুড়ো করে এখানে চলে এসেছি। তাছাড়া পাবলিক টয়লেটে গেলে টাকা দিতে হবে। কিন্তু এটা তো এখন একটা পরিত্যক্ত ভবন। এখানে কোনও টাকা লাগে না। সবাইকে দেখছি এখানে এসে জরুরি কাজ সারছে, তাই আমিও এসেছি।’ সুজা উদ্দিন নামের এক পথচারী বলেন, ‘গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্তত তাদের কার্যালয়ে যেতে পারতো, কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের যেই পরিণতি হয়েছে তা কল্পনাতীত। কে ভেবেছিল আওয়ামী লীগের কার্যালয় গণশৌচাগারে পরিণত হবে।’ এই পথচারী আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তার ফল এখন আওয়ামী লীগ পাচ্ছে। তাদের ফেরার কোনও পথ দেখছি না। তারা যদি নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হয়, তাহলে এই দেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না।’ আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় উঠতেই দেখা যায়, ৫-৬ জন ভবঘুরে বিছানা পেতে লুডু খেলে সময় পার করছে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম তলায় আরও কয়েকজন ভবঘুরে মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন মাস ধরেই এখানে অবস্থান করছেন। বলা চলে তাদের ঘরবাড়ি এখন এই ভাঙাচোরা কার্যালয়। তৃতীয় তলায় লুডু খেলা শরীফ নামের এক ভবঘুরে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে এই ভবনের কাছে-কিনারে আমরা আসতে পারতাম না। আমাদের গায়ের ময়লা কাপড় দেখে বড় বড় নেতারা দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতো। এখন এখানে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু সেই বড় নেতারা হারিয়ে গেছে, তাদের আর দেখা মেলে না।’ সপ্তম তলায় ধ্বংসাবশেষে শুয়ে থাকা মাহিম নামের এক ভবঘুরে বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনে ময়লার কাজ করি। মাসে ছয় হাজার টাকা পাই। থাকার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নাই, আগে রাস্তায় বা যেখানে জায়গা পেতাম সেখানেই ঘুমাতাম। গত তিন মাস ধরে এখানে থাকছি। আমিসহ আরও ১৫-২০ জন রাতে এখানে থাকি।’ শুধু ভবঘুরে কিংবা ছিন্নমূল মানুষ নয়, অনেক শ্রমজীবী মানুষও আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়ে রাতে ঘুমাতে আসেন। মো. সোহেল নামের এক রিকশাচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিকশা চালানো শেষে গ্যারেজে রেখে আমি আর শাহিন নামে আমার আরেক বন্ধু এখানে এসে রাতযাপন করি। দেড় মাস ধরে আমরা এখান থাকি। আগে তো রিকশার ওপরেই ঘুমাতাম। এখন একটু আরামে ফ্লোরে কাঁথা পেতে ঘুমাই।’ দিনের বেলায় মাদকাসক্তদের তেমন আনাগোনা চোখে না পড়লেও সন্ধ্যা হলেই মাদকাসক্ত এবং যৌনকর্মীদের আনাগোনা বেড়ে যায় গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই কার্যালয়ে। পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে কারবারিরা এখানে অবাধে মাদক বিক্রি করেন। বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চতুর্থ তলায় কয়েকজন মাদকাসক্তের সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। আপনারা কারা, এখানে কী করছেন— এমন প্রশ্ন শুনে অনেকটা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান তারা। এছাড়া দুজন নারীর উপস্থিতিও লক্ষ করা যায় সেখানে। তাদের একজন বলেন, পেটের দায়ে এখানে এসেছি। আগে তো রাস্তায় কাজ করতাম। এখন এটা নিরাপদ জায়গা। তাছাড়া এখানে আসার জন্য টাকাও দিয়েছি। টাকা কাকে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ভবনে কাজ করতে হলে প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০ বা ১০০ টাকা দিতে হয়। এদিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মী না আসায় ব্যবসায় ধস নেমেছে আশপাশের হোটেল ও ফুটপাতের চায়ের দোকানিদের। মালেক ব্যাপারী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা চলতো পার্টি অফিসে আসা নেতাকর্মীদের দিয়ে। এখন আর সেই ব্যবসা নাই।’ অনেক নেতাকর্মীর কাছে বকেয়া থাকা অনেক টাকা পাননি বলেও জানান এই দোকানি। মুরাদ মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার আগে চায়ের দোকান ছিল। এখন কাপড়ের দোকান দিয়েছি। আগে বেশিরভাগ কাস্টমার ছিল পার্টি অফিসে আসা নেতাকর্মী। এখন তো আর তাদের আনাগোনা নেই। তাই আমিও ব্যবসা পরিবর্তন করে ফেলেছি। শুধু আমি না, আমার মতো আগে যাদের পার্টি অফিসকেন্দ্রিক বেচাকেনা ছিল তারা সবাই ব্যবসা পরিবর্তন করেছে।’ এদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনীতির মাঠে শক্তভাবে ফিরতে পারলে আগের মতো জমজমাট হয়ে যাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শিগগিরই মাঠে ফিরবে। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তখন আবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয় জমজমাট হয়ে যাবে। তবে কবে আবার এই কার্যালয় পুনরায় নির্মাণ করা হবে তা শীর্ষস্থানীয় নেতারা ভালো বলতে পারবেন।’ গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুনর্নির্মাণের বিষয়ে জানতে দলটির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এই প্রতিবেদক।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দৌলতপুরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র‍্যালি ও পথসভা কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে অনুষ্ঠানের বাড়িতে মারামারি সাবেক সদস্য প্রীতি সমাবেশ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যুদ্ধ-পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে বললেন ড. ইউনূস ভরিতে ২ হাজার টাকা বেড়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম ‘বাজারে সিন্ডিকেট থাকলে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’ কারাগারে থাকা সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ‘ভাইরাল’যা বলল কারা অধিদপ্তর ৪৮ ঘণ্টায় ১০০-র বেশি কম্পন, বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা শেরপুরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ কবিতা – বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যে কারণে ভারতকে আর ছাড় দেবে না বিজিবি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া হবে যে শর্তে! সীমান্ত হত্যা বন্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ! আমেরিকা দখল কেন অসম্ভব? নির্বাচনে বিএনপি ডাকলে দেশে ফিরবেন মেজর ডালিম, রাশেদরা? ইবি ডিবেটিং সোসাইটির আহবায়ক ইরানী, সদস্য সচিব দিদারুল সাবেক ২ নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শালিখায় ৩০পিচ ইয়াবাসহ এক মাদক কারবারি আটক কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন