সাধ থাকলেও সাধ্য নেই – দৈনিক গণঅধিকার

সাধ থাকলেও সাধ্য নেই

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩০ আগস্ট, ২০২৩ | ৬:২৭
অন্যান্য পণ্যের মতো মাংসের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রতি রাতে চক্রের সদস্যরা মুরগির দাম নির্ধারণ করছে। এতে উৎপাদন খরচ কেজিতে ১৩৫ টাকা হলেও ব্রয়লার মুরগি খুচরা বাজারে ভোক্তাকে ১৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি মুরগি, সোনালি, লেয়ার ও কক মুরগি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি গরু ৮০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা হওয়ায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস বাড়ছে। সপ্তাহে যারা একবার মাংস কিনতেন, তারা মাসে একবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর গরিবের জন্য এই মাংস রীতিমতো মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বাজারে গিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন। আবার অনেকেই দাম শুনে নিরুপায় হয়ে ঘোরাফেরা করছেন। অর্থাৎ তাদের সাধ আছে ঠিকই, কিন্তু মাংস কেনার সাধ্য হচ্ছে না। রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে উল্লি­খিত চিত্র। মঙ্গলবার বাজারগুলোয় সরেজমিন দেখা যায়, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৬৫০-৭০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা। গত বছর ৯০০-৯৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০, যা গত বছর ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০, যা আগে ৫৫০ টাকা ছিল। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮০-৪০০, যা আগে ছিল ২৮০-৩০০ টাকা। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩১০, আগে বিক্রি হয়েছে ২২০-২৩০ টাকা। কক মুরগি প্রতি কেজি ৩০০, যা গত বছর একই সময় ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি জোড়া হাঁস বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০০ টাকা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াবাজারে অন্যান্য ক্রেতার মতো গরুর মাংসের দোকানে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) আমার সাপ্তাহিক ছুটি, তাই বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছি। অনেকদিন ধরে ছেলেমেয়ে গরুর মাংস খেতে চাচ্ছে। তাই মাংসের দোকানে আসা। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। তাই আধা কেজি দিতে বলেছি। তিনি জানান, এক সময় সপ্তাহে একদিন হলেও গরুর মাংস কেনা হতো, এখন মাসে একবারও কিনতে পারি না। এ ছাড়া সব ধরনের মুরগির দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই মাংস কেনা যেন দায় হয়ে পড়েছে। একই দিন বেলা ১১টা, রাজধানীর রায় সাহেব বাজারে মাংসের দোকানে এসেছেন দিনমজুর মো. লাবু মিয়া। বাজারের একটি গরুর মাংসের দোকানে গিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। বিক্রেতাকে মূল্য জানতে চেয়ে দাম শুনে নিরুপায় হয়ে ঘোরাফেরা করছেন। কিছুক্ষণ পর গেলেন ব্রয়লার মুরগির দোকানে। সেখানেও দাম শুনে গেলেন মুরগির পা-পাখনা ও কলিজার দোকানে। জানতে চাইলে তিনি অসহায়ের মতো যুগান্তরকে বলেন, কুরবানির ঈদে কয়েক টুকরা গরুর মাংস খেয়েছি। এখন পর্যন্ত খেতে পারিনি। ভেবেছিলাম ছোট ছেলেটার জন্য কিনব। আমি দিনে যে টাকা ইনকাম করি, তা দিয়ে কেনা সম্ভব না। তাই সবকিছু চিন্তা করে এক ভাগা ১৫০ টাকা দিয়ে মুরগির পা-পাখনা ও গিলা-কলিজা কিনেছি। আমাদের মতো মানুষের মাংস খাওয়া কপাল থেকে উঠে গেছে। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, যেভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত যে উৎপাদন ব্যয়, তার চেয়ে বাজারের দাম অনেক বেশি। তাই সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে। কেন এত দাম, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনিয়ম পেলে অসাধুদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ দাম বাড়ায় গরিবের আমিষে টান পড়ছে। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুচরা, পাইকারি, খামারি ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে। সভা শেষে ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে করপোরেট ব্যবসায়ীদের ১৩৫-১৪০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সেই মুরগি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বড় ব্যবধানে। করপোরেট ব্যবসায়ীরা এসএমএস-এর মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যে দাম নির্ধারণ করে, রাজধানীসহ সারা দেশে ওই দামে বিক্রি হয়। এসব অভিযোগ করপোরেট ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেন। এসব ঘটে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের সামনে। তখন বাজার অস্থির করার পেছনে কারা দায়ী সেটা প্রমাণ হয়। সরাসরি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আলোচনা সভার সব চিত্র একটি প্রতিবেদন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয় হয়। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, বাজারে মুরগির দাম বেশি থাকলেও খামার পর্যায়ে যথাযথ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মুরগির খাবারের বাজারও তাদের দখলে। এতে ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য দিনদিন পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা রেডি ফিডের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬০০ টাকা। এক বছর আগে রেডি ফিডের দাম ছিল ২৪০০ টাকা, এখন ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশে কেজিপ্রতি গরুর মাংস ৪৫০ টাকার উপরে খরচ হয় না। কিন্তু ক্রেতার ৮০০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব সময় মাংসের দাম সিটি করপোরেশন ঠিক করে। বর্তমানে তারা মূল্য নির্ধারণ করছে না। তবে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের টিম সার্বিকভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।

দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
‘পবিত্র’ কাফনের রক্ত-রহস্য ভোরে নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খেতে যান আসিফ মাহমুদ, বন্ধ থাকলে যান ওয়েস্টিনে খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ রাজশাহীতে ৪ লাঁশ উদ্ধার চারঘাটে ১২৪ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক রাজশাহীতে খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অস্ত্র বের করলেই গুলি: সিএমপি কমিশনার দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ নিহত ৩ কুষ্টিয়ায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার বৃদ্ধ শ্বশুরকে পুত্রবধু ও তার স্বজনদের নির্যাতন দৌলতপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে সোর্স গুলিবিদ্ধ গলাচিপায় গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে রেইনকোর্ট বিতরণ রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তরুণরা কেন বেশি বিশ্বাস করে সাত মাসে ২৫৯ শিশু খুন নির্যাতনও বাড়ছে স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করায় অলিকে হত্যার পর লাশ ৮ টুকরো করেন সাদেক: র‌্যাব রাজশাহীতে স্কুলছাত্রী অপহরণের মূলহোতা গ্রেফতার, ভিকটিম উদ্ধার নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে: জয়ন্ত কুমার কুন্ডু গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার ৪ অসুস্থ স্ত্রীকে কবর দেওয়ার চেষ্টা স্বামীর, ভিডিও ভাইরাল ঢাবির হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা