
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ঈশ্বরদীতে টানা ৪০ দিন মসজিদে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেলেন শিক্ষার্থীরা

মাহফিলে পদদলিত হয়ে আহত ৩০

একদল যায়, আরেক দল এসে লুটে খায়

রূপপুরে গ্রিনসিটির ৪ তলা থেকে লাফ দিয়ে রুশ নারীর আত্মহত্যা

কুষ্টিয়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার

মধুখালীতে সাংবাদিকের বাবা-মাসহ ৩ জনকে কুপিয়ে জখম

আজও পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
মংলায় বিনামূল্যে দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে লায়ন্স ক্লাব

রাবেয়া বেগম (৫৫)। দীর্ঘদিন চোখে দেখতে পান না ঠিকমতো। অন্যের কাঁধে ভর করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। চিকিৎসা করাতে পারলেই তিনি পুরোপুরি ফিরে পাবেন দুই নয়নের আলো। কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে সেটি সম্ভব না। তবে বিনামূল্যে চোখের সকল প্রকার চিকিৎসা করাচ্ছেন লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। মাইকে এমন খবর শুনে শুক্রবার (১৭ মে) ভোরেই ছেলে মিকাঈল সরদারের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। এরপর বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপাই গ্রাম থেকে রামপাল উপজেলার বড়দিয়া এলাকায় ছুটে আসেন তিনি। এসে দেখেন তার মতো শত শত নারী-পুরুষ চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় তিনি দেখেন বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা ও চিকিৎসাপত্রে ওষুধ লিখে নিয়ে চোখে-মুখে স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ।
শুক্রবার (১৭ মে) সকালে সরেজমিনে রামপালের বড়দিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। এ সময় কথা হয় সখিনা বেগম (৬৬), রজ্জব আলী মোড়ল (৬৭), আবু বক্কর সিদ্দিক শেখ (৬৫), দীন মোহাম্মদ (৭৪), গোনজেরা বেগমসহ (৭০) বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। এছাড়া এদিন সেবা নিতে আসা মানুষজনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব রোগীর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং দৃষ্টি উন্নয়ম সংস্থা ও লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের সহযোগিতায় ৩ হাজার মানুষকে এদিন বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ড. ফরিদুলের বাড়ির পাশেই বড়দিয়া হাজী আরিফ (রহ:) মাদরাসার মাঠে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও।
এ সময় দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত মানুষ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রত্যাশীদের নির্দিষ্ট বুথে পৌঁছে দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে করা হচ্ছে মাইকিং। মোট ৪টি বুথে আই ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রামপাল উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হলেও পুরো রামপাল উপজেলা ছাড়িয়ে মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট জেলা, খুলনার দাকোপ থেকেও মানুষজন আসেন বিনামূল্যে চোখের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে। পাঁচজন চিকিৎসকসহ ১৫ জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম এখানে সেবা দিতে আসেন।
এদিন উপস্থিত থেকে সেবা দেওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামকে।
তিনি বলেন, আমার জীবনবোধের চিন্তাভাবনা থেকে এই সেবামূলক কার্যক্রম করছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এই পৃথিবীতে যখন এসেছি একদিন আবার আমাকে চলে যেতে হবে। পরকালে আমার প্রত্যেকটা কাজের হিসাব দিতে হবে। তাই হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একটু সেবামূলক কার্যক্রম করছি।
তিনি আরও বলেন, বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা দিতে আমরা এখন পর্যন্ত চারটি ক্যাম্প করেছি এখানে। এ উপজেলায় আরও দুইটি ক্যাম্প করার ইচ্ছা আছে আমাদের। তাহলে পুরো উপজেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বিনামূল্যের এই সেবা পৌঁছে যাবে। এই উপজেলায় অনেক অসহায় মানুষ আছেন, যারা জানেনও না চোখের ছানির জন্য মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখে কম দেখাসহ অনেকের চোখে সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তারা বুঝতেও পারেন না চোখে সমস্যা আছে। এমন মানুষদের চোখকে সুস্থ রেখে তাদের মুখে হাঁসি ফোটাতে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষের চোখের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ৬২০০ জনের চোখের অপারেশন করা হয়েছে বলেও জানান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।
আই ক্যাম্পের চিকিৎসক এসএন সাহা বলেন, ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা এখানে এসেছি। আমরা দেশের অনেক জায়গায় আই ক্যাম্প করেছি। তবে রামপাল উপজেলায় বেশি সাড়া পেয়েছি। চিকিৎসা নিয়ে এ এলাকার মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে দেশের অন্য কোথাও কেউ ডাক দিলে আমরা সেখানে আই ক্যাম্প করতে যাবো। আজকের ক্যাম্পে যেসব রোগীদের অস্ত্রোপচার দরকার-তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়েছে। ওইসব রোগীকে ‘ঢাকা দৃষ্টি আই’ হাসপাতালে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করানো হবে। তাদের আসা-যাওয়াসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করবেন ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি লায়ন ড. ফরিদুল ইসলাম।
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।