বসন্ত-ভালোবাসা-বইমেলা
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি উজ্জীবিত আর আন্দোলিত হওয়ার অনন্য শুভ যোগ। আনন্দ আর উৎসবমুখর আবেশে মাতিয়ে দেওয়ারও বিচিত্র অনুভব। এমন অকৃত্রিম সম্পদ আত্মপরিচয় আর অস্তিত্ব সংকটের দোলাচলে বাঙালির নতুন মাত্রায় জেগে ওঠারও ঐতিহাসিক পরম্পরা। চিরন্তন এই বোধে আবহমান বাংলা এক অবিমিশ্র সম্ভারে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে দীপ্যমান। আবার ষড়ঋতুর বৈচিত্রিক আবেদনে নৈসর্গিক বাংলা যেভাবে কোলের সন্তানদের উদ্বেলিত করে সেটাও উর্বর পলি অঞ্চলের অকৃত্রিম দান।
উৎসব আর আয়োজনে বারোমাসে তেরো পার্বণের প্রবাদ বাক্যে সম্পদশালী বাংলা বরাবরই ঐশ্বর্যসমৃদ্ধ। তেমন বাঙালিয়ানায় যুগ-যুগান্তরের সমৃদ্ধ বাংলা চিরায়ত বোধের এক অনন্য নজির। প্রকৃতির সুরম্য লীলা নিকেতন এই শ্যামল উর্বর অঞ্চল ষড়ঋতুর নানামাত্রিক নান্দনিক আবেশে যে প্রতিবেশ তৈরি করে তাও যেন ফুলে, ফলে, শস্য সম্ভারে সজ্জিত নৈসর্গিক। আমরা শুধু ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিই নয়, বরং বসন্তরাজকে স্বাগত জানানোর এক বর্ণিল সমারোহে অবগাহনও করছি।
ফুলেল শোভাবর্ধনে সজ্জিত ঋতুরাজ বসন্তই বটে। কনকনে শীতের অনুভবে প্রকৃতি যখন জড়োসড়ো তখন বসন্তের নির্মল ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে নৈসর্গিক ও সতেজ-সজীব। ষড়ঋতুর এই দেশে গ্রীষ্ম আসে প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে, যা প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুদ্ধ করে দেয় বলে রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক অনুভব। আর নদীমাতৃক বাংলার বর্ষণস্নাত অবারিত জলরাশি মানুষ ও প্রতিবেশকে যে স্নিগ্ধতার প্রলেপ বুলিয়ে দেয় তা যেন ভাব জগতে বিচরণ করার এক অনন্য সৌধ। আর শরৎ আসে নিজস্ব সম্ভারের বিশেষ আবেদন নিয়ে।
যেখানে আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা রোদ ও বৃষ্টির চমকপ্রদ লুকোচুরি খেলা। আর হেমন্ত সাজে নবান্নের উৎসবে। কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন শস্যের অবারিত সমারোহ, যা পিঠা-পুলির আমেজে সাজতে সাজতে হিমেল শীতকে আমন্ত্রণ জানায়। এরপর মহা আড়ম্বরে বর্ণিল বসন্ত তার সামগ্রিক আবেদনে শুধু প্রকৃতিই নয়, বরং কোলের সন্তানদেরও আবেগে আপ্লুত করে তোলে। তেমন আবেগময় এক স্নিগ্ধ পরশের অনন্য অনুভব এই সময় সারা প্রকৃতিতে ফুলের ছোঁয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে। বসন্তের বর্ণিল আয়োজনের এই এক অপার মুগ্ধতা তো বটেই।
বসন্তের শুভাগমনে প্রকৃতিতে সাজসাজ রবের যে ধ্বনি অনন্য ঝংকারে আপ্লুত করে দেয় সেখানে ১৪ ফেব্রুয়ারির ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য আরও মহিমান্বিত হয়। ঋতুরাজ বসন্ত কিন্তু প্রকৃতিতে সর্বক্ষণ বিরাজও করে না। বরং ঋতু বৈচিত্র্যের আবাহনে বিশেষ প্রকৃতিতে সাড়া জাগায়। আর প্রেম-ভালোবাসার প্রীতির বন্ধন অনুক্ষণের, প্রতিদিনের। মানুষের নিত্যজীবনের এক অসাধারণ অনুভব অনুভূতি।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি যেমন ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় বিচিত্র আবেশে জীবনকে বর্ণময় করে তোলে- একইভাবে ভালোবাসার অনন্য বোধও দেশ ও মাতৃভাষাকে বিশেষভাবে নাড়িয়েও দেয়। সঙ্গত কারণে মাতৃভূমি, মুখের ভাষা, বসন্তের অপার মাধুর্য আর ভালোবাসার নির্মল ও আত্মিক বন্ধনে ফেব্রুয়ারি যেন হয়ে ওঠে এক নিগূঢ়তম বন্ধনের অভাবনীয় দ্যোতনা। সেখানে অমর একুশের গ্রন্থমেলার মিলন সৌধে তা আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আর চিরায়ত গ্রন্থ পাঠের বোধ?
তা যেন আরও বেশি করে নিত্যজীবনের অনুষঙ্গ। বই হবে যাপিত জীবনের অনন্য ঝংকার, দৈনন্দিন কর্মযোগের আবশ্যকীয় বিষয়ও বটে। পাঠক, লেখক আর প্রকাশনা সংস্থার অবিমিশ্র মিলন স্রোতে যে গ্রন্থ সংশ্লিষ্টদের আনন্দস্রোতে ভাসিয়ে নেয় সেটাও জীবনের অমূল্য সম্পদ। তা নিয়ত চর্চা, অনুশীলন, পরিশীলিত মনোসংযোগে প্রতিদিনের সঙ্গী করে নেওয়াও সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা।
আপন সংস্কৃতির বেড়াজাল মাতৃভূমিকে যে মাত্রায় জাগিয়ে তোলে সেখানে গ্রন্থপাঠের মতো একটি সুন্দর ও সুখকর অভ্যাসকেও আমাদের ভেতরের বোধে সজাগ করে তুলতে হবে। মায়ের ভাষাকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা যেভাবে নিজেদের রক্তের সাগরে উৎসর্গ করে সেই নিঃশর্ত নিবেদনের অকৃত্রিম শৌর্য অন্য সব কিছুকে ছাপিয়েও যায়। সঙ্গত কারণে শহীদের রক্তের আলপনায় যে ভাষা স্বীয় ঐশ্বর্যে অম্লান সেখানে ভাষার গৌরবান্বিত মাসটিও দেশের মাটিকে রক্তিম আভায় রাঙিয়ে নেয়।
এর আগে কোনো জাতিকে ভাষার জন্য মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল কিনা জানা নেই। তেমন ভাষাকে সমাজের সর্বস্তরে সর্বজনীন করা হয়েছে কিনা তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে যে রক্তিম স্রোতে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল তার ’৭১ বছর পরেও সমৃদ্ধ মাতৃভাষা আজ কোন অবস্থানে? সেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও আমরা পার করে এলাম। আবার মাতৃভাষার যথাযথ অবস্থানে আমরা কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে? প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাড়া জাগায় সন্দেহ নেই।
কিন্তু মাতৃভাষার সার্বিক অবস্থান শুধু তা দিয়ে নির্ণয় করা কঠিন। এরপরেও অনেক অর্জন আর সম্ভাবনা আমাদের চারপাশে আলো ছড়াচ্ছে। যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যা সারাবিশ্ব একই সঙ্গে উদ্্যাপন করে। পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এটাও কম বড় সফলতা নয় বাংলা ও বাঙালির জন্য। আবার পিতার পথ অনুসরণ করে কন্যাও জাতিসংঘে মাতৃভাষায় নিজের বক্তব্য উপস্থাপন দেশ ও জাতির জন্য অহঙ্কার ও গৌরব।
বলা যায় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এখন অবধি তার সর্বময় আবেদন ও আবেগ নিয়ে বিশ্ব পরিসরে নিজের জায়গা করে নেওয়াও কম কথা নয়। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগ ছাড়া দেশ ও জাতির মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়। আর রবীন্দ্রনাথের ভাষায় শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ। অর্থাৎ শিক্ষাজীবনের প্রারম্ভিক স্তর মাতৃভাষার অভিযোজন ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম পূর্ণতা পায় না।
সঙ্গত কারণে মাতৃভাষার চর্চা ও অনুশীলন অতি বাল্যকাল থেকে যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ করাই উত্তম। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি তার বহুমাত্রিক আবেদন নিয়ে পরিবেশÑপরিস্থিতিতে যে মাত্রায় উপলব্ধি আর অনুভবে সাড়া জাগায় সেটার অনবদ্য দ্যোতনায় দেশ ও জাতি নতুন করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার প্রেরণা ও শক্তি অর্জন করে। তাই ভাষা আন্দোলন, একুশ ফেব্রুয়ারি আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা।
মাঝখানে করোনার চরম বিপর্যয়ে বইমেলার সাময়িক বিরতি জাতির জন্য অশনিসংকেত। তবে ২০২০ সালে প্রথম করোনা শনাক্তের দুঃসময় হলেও সে বছর একুশে বইমেলার আয়োজন করা ছিল শেষ উৎসব। তবে ২০২১ সালে কোনো বইমেলা আয়োজন করার সুযোগই ছিল না। ঐ সময় একুশের গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশ না হওয়া আপামর জনগোষ্ঠীর চিরায়ত বোধ আর অভ্যাসের ওপরও এক প্রকার ব্যবচ্ছেদ বলাই যেতে পারে।
নিত্যজীবনের এক অপরিহার্য বিষয় সম্ভার থেকে যখন মানুষ আলাদা হয়ে যায় সেখানে তার চিন্তাশক্তিতেও আসে স্থবিরতা ও জড়তা। চরম ছোঁয়াছে এই রোগটি এমনিতেই স্থবিরতার আবর্তে সারাবিশ্বকে থমকে দিয়েছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির গ্রন্থমেলার আনুষ্ঠানিক পর্বটাই ছিল প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সর্বশেষ কর্মযোগ। ৮ মার্চ থেকে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে বিশ্বের মতো বাংলাদেশও যখন থমকে যাওয়ার দুরবস্থায় আবর্তিত তেমন দুঃসময়ে সব কিছুর ওপর স্থবিরতার প্রলেপ আটকে দেওয়া হয়।
শিক্ষা কার্যক্রমও প্রাতিষ্ঠানিক বলয় থেকে ছিটকে পড়ে প্রযুক্তির আঙিনায় নতুন পাঠক্রম শুরু করে দেয়। গ্রন্থপাঠ ছাড়া এই পাঠক্রম এখন পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। যে কোনো বই শুধু আমাদের চৈতন্যের বোধকে জিইয়ে রাখে না, বরং নিত্যনতুন জ্ঞান আহরণে জীবনকে অন্য মাত্রায় পরিশুদ্ধ, পরিশীলিত করে। তাই বইয়ের চিরস্থায়ী আবেদন কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। আর বইমেলাও অনন্য সম্ভারে শুধু পাঠককে আন্দোলিত করে তা কিন্তু নয়, তার চেয়েও বেশি এক সুন্দর ও নান্দনিক অভ্যাসের নিয়ত চর্চাও হয়। চিরায়ত এক প্রচলিত প্রবাদ :
কেবল আপন দেশে রাজার সম্মান
সব দেশে পূজা পান যেজন বিদ্বান।
গ্রন্থপাঠের সঙ্গে শুধু মাতৃভাষা নয়, বরং বইমেলার অভাবনীয় আয়োজনও অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে। এবারের মহান ভাষা দিবস তার শুভ যাত্রা সূচনা করবে নানামাত্রিক আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশায়। তার সঙ্গে বইমেলার সামগ্রিক দৃশ্যপট, উৎসব ও আড়ম্বরের মিলন দ্যোতনা। তবে প্রকাশনা সংস্থার আর্থিক যোগসাজশের সঙ্গে মেলাতে হয় গ্রন্থ প্রকাশের উৎসব ও আনন্দ। করোনার চরম দুর্বিপাকে প্রকাশনা শিল্পের যে সংকট দৃশ্যমান হয়েছে সেটা এখনো সংশ্লিষ্টদের তাড়িয়ে বেড়ায়। গ্রন্থ প্রকাশের মূল কার্যক্রমই যদি বেহাল অবস্থায় ঠেকে সেটাও জাতির জন্য শুভযোগ নয়।
ঘাটতি মেটাতে কাগজ, ছাপা থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বেড়ে যাওয়া এক অবধারিত বিপদ। এমনিতেই ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা তার যে বেহাল চিত্র উন্মোচন করে বিভিন্ন খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে জানানও দিচ্ছে। সেখানে প্রকাশনার আর্থিক সংকটও সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলছে। সৃজন ও মনন দ্যোতনায় এমন অনাকাক্সিক্ষত চাপ জ্ঞানচর্চায় নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের চিন্তায়ও ফেলে দিচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ তার সামগ্রিক সমস্যা সংকট কাটিয়ে উঠে আবারও নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র সত্যিই স্বস্তিদায়ক। যা ২০২৩ সালের গ্রন্থমেলায় সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। প্রকাশক, লেখক আর পাঠকের অভাবনীয় যোগসাজশে বই প্রকাশের সংখ্যা যেমন বেড়েছে গত দুই বছরের তুলনায় পাশাপাশি অনেক সংকট সামলানোর চিত্রও আশ্বস্ত হওয়ারই মতো। ‘অমর একুশে’ গ্রন্থমেলার আগেই পুরো জানুয়ারি মাস পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত ‘বাণিজ্যমেলা’র সাড়ম্বর আয়োজন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সফল কর্মযোগ। তারই সুসংবদ্ধ ধারাবাহিকতায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলার উদ্বোধন জাতির জন্য মঙ্গলজনক।
এবারের বাণিজ্য ও বইমেলায় সরাসরি উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক আয়োজনের দ্বার উন্মোচন করেছেন সেটা সকলের জন্য আনন্দ আর সুখের বার্তা। বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বার্ষিক অনুষ্ঠানমালা তার গতিশীল কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখাও এক নিশ্চিত কর্মদ্যোতনা। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য দেশের জন্য সত্যিই মাইলফলক। যা ভিত্তি তৈরি করে দেয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক পটভূমিকে।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় অর্জন। কিন্তু যে ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা লড়াই করলাম, এত রক্ত ঝরালাম, লক্ষাধিক প্রাণকে উৎসর্গ করতে হলো সেই ভাষা ও ঐতিহ্য আজ কোন অবস্থানে? আমরা আদৌ কি মাতৃভাষাকে তার যথার্থ আসনটা দিতে পেরেছি? মুষ্টিমেয় মানুষের মাতৃভাষা চর্চা আপামর জনগোষ্ঠীর মঙ্গল সাধনে কি যথেষ্ট? দিনের পর দিন মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া যা নি¤œবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জীবন ও শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্বকে হালকা করে দিচ্ছে।
আর উচ্চবিত্তের জন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুল-কলেজ তো আছেই। এসব সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ার দিকে। উচ্চশিক্ষায় বিদেশী ভাষা আবশ্যক হলেও শৈশব-বাল্যকাল থেকে জীবনের একটা কালপর্বে মাতৃভাষার চর্চা অপরিহার্য। তা না হলে দেশে পরবাসী হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তরও থাকে না। তার ওপর ভিনদেশী চ্যানেলগুলো আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে বিজাতীয় প্রভাব ফেলছে সেখানেও মাতৃভাষা হুমকির মুখে পড়ে যাবার উপক্রম।
এর থেকে বের হয়ে আসার পথ নিজেকেই চিনে নিতে হবে। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানও মাতৃভাষার মাধ্যমে আপামর জনগোষ্ঠী, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নে গতিশীল ভূমিকা রাখবে। চীন, রাশিয়া, জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলো মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম অবারিত করতে সব ধরনের ভূমিকা পালনে কিছুমাত্র দ্বিধা করেনি। সেখানে শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে দাপ্তরিক কর্মযোগ ছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাও মাতৃভাষায় অনুশীলনের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে একদম দেরিও করেনি।
সমৃদ্ধির সবক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সফলতা নিয়ে আসতে প্রতিনিয়ত মাতৃভাষাকেই যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথও নেই। ভাষা আন্দোলনের এই ঐতিহাসিক মাস শুধু শপথ গ্রহণ নয়, নিয়ত মাতৃভাষাকে চর্চা ও অনুশীলন করার প্রত্যয়ী অঙ্গীকারও বটে।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক গণঅধিকার সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।